
হওড়ায় আইনজীবীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন আগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল হাওড়া আদালত চত্বর। গাড়ি রাখাকে কেন্দ্র করে পুরসভার কর্মী এবং আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে লাঠিচার্জ করে পুলিশ বাহিনী। আইনজীবীদের অভিযোগ কোর্টে প্রবেশ করে আইনজীবীদের উপর লাঠিচার্জ করেছিল পুলিশ, যা অনৈতিক। তাই সেই সমস্ত পুলিশ এবং তারা যাদের নির্দেশে সেই কাজটি করেছিল সেই অফিসারদের শাস্তি চেয়ে আদালতের নিকট দ্বারস্থ হয়েছিলেন আইনজীবীরা। দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে কোর্টের তরফে এই বিষয়ে ঘোষণা করা হলো ঐতিহাসিক রায়।
দীর্ঘদিন ধরেই টালবাহানা চলছিল আইনজীবীদের এই কেসকে কেন্দ্র করে। অভিযুক্ত পুলিশ এবং পুরসভার কর্মীরা উপযুক্ত শাস্তি না পেলে কাজ করবেননা কোনো আইনজীবী, এই বক্তব্য জানানো হয়েছিল বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে। সেই হিসেবে গত ২৫ এপ্রিল থেকে সমস্ত জায়গায় নিজেদের যাবতীয় কাজ বয়কট করেছিলেন আইনজীবীরা। সঠিক রায় না দেওয়া হলে যে এই বয়কট ওঠানো হবেনা সেটিও জানানো হয়েছিল আইনজীবীদের তরফে। অবশেষে আজ এই বিষয়ে কড়া রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
আজ বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয় এই মামলাটির। শুনানিতে আইনজীবীদের পক্ষে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়-এ জানানো হয় যে,
এই বিষয়ে প্রাপ্তন বিচারপতি কল্যানজ্যোতি সেনগুপ্তের নেতৃত্বে এক তদন্তকারী কমিটি গঠন করতে হবে। এবং সেই কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে এই ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট।
এই তদন্ত চলবে অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিক যথা, হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের সিপি বিশাল গর্গ, পুলিশ আধিকারিক রাজর্ষি ভাবনা গুপ্তা , অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজর্ষি দত্ত, গুলাম সাবার, ধিপেন তামাং, এবং ভিএসআর আনন্দ কুমারের বিরুদ্ধে। আর এই তদন্ত চলাকালীন এই পুলিশ আধিকারিকরা হাওড়া জেলার কোনো দায়িত্বে থাকতে পারবেননা বলে আদেশ দেওয়া হয় কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে।
কোর্টের দ্বারা গঠিত তদন্ত কমিটি এদের বিভিন্ন কার্যের তদন্ত করবে। এবং সময়মতো তারাই এই পুলিশ আধিকারিকদের কার বিরুদ্ধে কি শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেই বিষয়ে সুপারিশ করবে।
এছাড়াও কলকাতা হাইকোর্টের তরফ হতে আরও নির্দেশ দেওয়া হয় যে, পুলিশ এবং আইনজীবীদের সংঘর্ষের পর যে যে আইনজীবীর বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছিল তাদের বিরুদ্ধে সেই এফআইআর-ও তুলে নিতে হবে পুলিশকে।
এই কড়া রায়ের পর এবারে দেখার বিষয় এটিই যে, আইনজীবীরা তাদের বয়কট তুলে নিয়ে ফের কাজে যোগ দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন কীনা৷