কলকাতা

নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত! অশান্তি এড়াতে এবার টেন্ডার ডেকে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পসে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অশান্তির জেরে উত্তেজনা মাঝেমধ্যে লেগেই থাকে। তবে গত দু’তিন বছরে সেই উত্তেজনা মাত্রা ছাড়িয়েছে। সেই কারণে অশান্তি এড়াতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজোর দায়িত্ব কোনও এজেন্সির হাতে দিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর জন্য ডাকা হল টেন্ডার। কর্তৃপক্ষের তরফে নোটিশ দিয়ে জানানো হয়েছে যে প্যান্ডেল বানানোর দায়িত্বে থাকবে টেন্ডার পাওয়া ওই এজেন্সি। ওই এজেন্সি ছাড়া অন্য কারোর হাতে টাকা দেবে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পুজোর আয়োজন, ৬-৭ ফুটের প্রতিমা-সহ অন্যান্য দশকর্মার জিনিস কেনার কাজ, আলপনা দেওয়া, প্রসাদ বিতরণের মতো কাজ ওই এজেন্সির মাধ্যমে করবে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত কমিটি। তাদের টাকা মেটাবে বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রছাত্রীরা পুজোয় যেমন অংশ নেওয়ার তেমনই নেবেন। প্রাক্তন কোনও ছাত্রছাত্রীর প্রবেশাধিকার নিষেধ। কোনও সাউন্ড বক্স বাজানো যাবে না। প্রতিমা বিসর্জনের দায়িত্বেও ওই কমিটিই থাকবে বলে জানা গিয়েছে। প্রথমে ছাত্রছাত্রীদের নোটিশ দিয়ে একথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি নির্দিষ্ট কাজগুলি করার জন‌্য ডাকা হয়েছে টেন্ডার ।

আগামী ২৬ জানুয়ারি সরস্বতী পুজো। এই অবস্থায় রেজিস্ট্রার দেবাশিস কুমার বসুকে এই বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপের আর্জি জানানো হয় এসএফআই, ডিএসও-র মতো বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির তরফে। এসএফআইয়ের কলকাতা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক সম্পৃক্তা বসুর অভিযোগ করেছেন, “পুজোর নামে ছাত্রছাত্রীদের থেকে জোর করে চাঁদা আদায়, পুজোর দিন মদ‌্যপ অবস্থায় অসভ‌্যতা চলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে। ক‌্যাম্পাসে এটা হতে দেওয়া যায় না। তাই রেজিস্ট্রার স‌্যরকে জানাই”।

অন্যদিকে, ছাত্র পরিষদের অন্যতম সম্পাদক শাক্যদীপ বসুর কথায়, “পুজোর টাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএমসিপির হাতে দিলে সেটা নয়ছয় হয়। ২০১৭-র পর থেকে ছাত্র-ভোট হয় না। অশান্তি রুখতেই তাই এটা করা”। এসমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি ক্যাম্পাসের ইউনিট কো-অর্ডিনেটর অভিরূপ চক্রবর্তী বলছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত আরও স্বচ্ছতা আনবে। পুজো বর্তমান ছাত্রছাত্রীরাই করবে। শুধু টাকাটা দেওয়া হবে টেন্ডার করে”।

আবার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে পুরোপুরি সহমত নন। তাঁর মতে, “পুজোটা ছাত্রছাত্রীদের। এজেন্সি হয়তো মসৃণভাবে ব্যাপারটা করবে। তবে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের হাতে পুজোর আয়োজন করে অনেক কিছু শেখে। তবে আমার মনে হয় পুজোর আয়োজনে কোনও অভিযোগ যাতে না ওঠে সেদিকে নজর রেখে ছাত্রছাত্রীরা পুজোর আয়োজন করলেই ভালো হত”।

এই গোটা বিষয়টা নিয়ে গতকাল, শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলোচনা করেছে। বিশ্ববিদালয়ের উপাচার্য আশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুজোর খরচ চিরকালই বিশ্ববিদ্যালয় করে। এবার সব ক্যাম্পাসের পুজোর খরচ কেন্দ্রীয়ভাবে করা হচ্ছে। পুজোটা ছাত্রছাত্রীরাই করবে। খরচটা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে করা হচ্ছে বলে টেন্ডার ডাকা হয়েছে”।

debangon chakraborty

Related Articles

Back to top button