ফের অভিযুক্ত ডিসান হাসপাতাল। অগ্রিম জমা দিতে না পারায় ফের করোনা রোগীকে দীর্ঘক্ষন অ্যাম্বুল্যান্সে ফেলে রাখার অভিযোগ!
আবার অভিযুক্ত হল কলকাতার নামজাদা বেসরকারি হাসপাতাল ডিসান(DESUN)। ফের একবার দাবিমতো অগ্রিম জমা দিতে না পারায় করোনা আক্রান্ত রোগীকে দীর্ঘক্ষন অ্যাম্বুল্যান্সে ফেলে রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত হল তারা। আবারও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য কমিশনের (west bengal government health commission) নির্দেশকে অগ্রাহ্য করল তারা। ৭৯ বছর বয়সী বৃদ্ধকে শুধুমাত্র অগ্রিম জমা দিতে না পারার জন্য হেনস্থা করল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধের। এই ঘটনার পরেই স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রয়াত বৃদ্ধের স্ত্রী শুভ্রা ঘোষ (Shubhra Ghosh)।
গত ২২শে অগাস্ট এক রায়ে স্বাস্থ্য কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছিল, অগ্রিম দিতে না পারলেও যেনও কোনও রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে ফেলে রাখা যাবে না। হাসপাতালের তরফে আগত রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেই হবে হাসপাতালকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সেবার অভিযুক্ত ছিল ডিসন’ই। করোনা আক্রান্ত এক মহিলার ডিসান হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্সে পড়ে থেকে মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই এই রায় দিয়েছিল কমিশন। সঙ্গে জানিয়েছিল, শুধুমাত্র চিকিৎসাধীন রোগীদের কথা ভেবে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করল না কমিশন। ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি হলেও সেই পথেও হাটতে পারে তারা।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত হিন্দুস্তান পার্কের বাসিন্দা ৭৯ বছরের বৃদ্ধ অশোককুমার ঘোষ (Ashok Kumar Ghosh) গত জুনে পরিপাকতন্ত্রে জটিলতা নিয়ে উডল্যান্ডস হাসপাতালে (Woodlands Hospital) ভর্তি হন। প্রথমে তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ থাকলেও ৭ দিন পর সেই রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এর পর দ্রুতই তাঁকে অন্যত্র সরানোর নির্দেশ দেয় উডল্যান্ড।
বৃদ্ধের স্ত্রী শুভ্রাদেবীর কথায়, ২ ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে কোনও করোনা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে নিজেদের দায়িত্ব থেকে হাত-পা ঝাড়ে উডল্যান্ডস। স্বামীকে বাঁচাতে তৎপর ওই মহিলা অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে ডিসান হাসপাতালে নিয়ে যান। ভর্তির আগেই অগ্রিম হিসেবে তাঁর কাছে ২ লক্ষ টাকা দাবি করে ডিসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুভ্রা দেবীর দাবি, সেই মুহূর্তে তাঁর অ্যাকাউন্টে অত টাকা ছিল না। কিন্তু টাকা না দিলে রোগীকে ভর্তি নেওয়া হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় অভিযুক্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর কেটে যায় বেশ কয়েক ঘণ্টা। বিদেশে থাকা এক আত্মীয়ের সৌজন্যে টাকা জোগাড় করে হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে জমা দেন তিনি। তার পর অশোকবাবুকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামানো হয়।
ডিসান হাসপাতালে ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যু হয় অশোককুমার ঘোষের। এর পর পরিবারের হাতে ধরানো হয় ৮.১৩ লক্ষ টাকার বিশাল বিল। সেই বিল নিয়েও কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন শুভ্রাদেবী।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় উডল্যান্ডস হাসপাতাল ও ডিসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হলফনামা চেয়েছে কমিশন। অভিযোগ অস্বীকার করেছে উডল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ। এখনো কোনও জবাব দেয়নি ডিসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যথাক্রমে দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে যথাক্রমে ১ লক্ষ ও ৪ লক্ষ টাকা জমা রাখতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ব্যবসাটাই এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল গুলির। ডিসান হাসপাতাল-এর বারংবার এই ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে।