কলকাতা

নিজেই করেন দোকানের ব্যান্ডিং! বিনামূল্যে ‘দুয়ারে চা’ নিয়ে আপনার বাড়ির সামনে হাজির মেধাবী রাজেন্দ্র

‘দুয়ারে চা’, শুনতে কী অন্যরকম লাগছে? তবে এমনই ঘটে চলেছে খোদ আমাদেরই এই শহর কলকাতায়। নিজের ব্র্যান্ডিং নিজেই করে সকলের দুয়ারে চা নিয়ে হাজির হয়ে যান মেধাবী ছাত্র রাজেন্দ্র। সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন চা বিক্রি করতে।

তাঁর পরনে গেঞ্জি, সেই গেঞ্জিতে লেখা তাঁর ফোন নম্বর। সাইকেলের সামনে রাখা দুটি থলে। একটিতে চায়ের জিনিসপত্র, অন্যটিতে বিস্কুট। এই সাইকেল নিয়েই শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে সে। উদ্দেশ্য? উদ্দেশ্য তো একটাই, সৎ পথে পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন।

রাজেন্দ্র দেওয়ান আসলে ওড়িশার বাসিন্দা। বছর সাতেক আগে বাবার সঙ্গে কলকাতায় চলে আসেন। হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ে সেই পেশার সঙ্গেই যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য পরিবারের উপর নির্ভর না একটা ছোটোখাটো চাকরি নেন তিনি। কিন্তু মাঝে বাদ সাধে করোনা। এর জেরে চাকরি হারান রাজেন্দ্র।

এরপর আর কোনও কাজ জোটে নি। চায়ের দোকান খুলতে চেয়েছিলেন কিন্তু টাকার অভাবে তাও হয়ে ওঠে নি। ভেবেই নিয়েছিলেন নিজেই পরিশ্রম করে নিজের খোরাক জোগাতে হবে। কেউ সাহায্য করবে নকা।

রাজ্য সরকারের দুয়ারে সরকার প্রকল্পের নামটি বেশ উদ্বুদ্ধ করে রাজেন্দ্রকে। সেই ট্যাগলাইন ব্যবহার করেই শুরু করে দিলেন সাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করা। নাম দিলেন, ‘দুয়ারে চা’। ব্র্যান্ডিং-এর জন্য নিজের গেঞ্জিতে ‘দুয়ারে চা’ লিখে, এর নীচে লিখে দিলেন নিজের ফোন নম্বর।

প্রথমের দিকে এই ব্যাপারটা ততটা সহজ ছিল না ঠিকই, কিন্তু ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে তাঁর চা। তাঁর চায়ে চুমুক দিয়ে অভিভূত হন লোকজন। লোকমুখেই তাঁর চায়ের প্রচার ঘটতে থাকে। ছড়াতে থাকে ফোন নম্বর। এখন তো সারাদিনই বাজছে ফোন। অফিস, আবাসন, স্কুল, পাড়া, নানান জায়গা থেকে অর্ডার আসে তাঁর চায়ের। এখন তাঁর জন্যই হাজির দুয়ারে চা।

রাজেন্দ্রর স্বপ্ন একদিন নিজের চায়ের দোকান খুলবে সে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই সাইকেলে করে চা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ৬ টাকায় চা বিক্রি করেন রাজেন্দ্র। সন্ধ্যার পর রাত ১২টা পর্যন্ত শহরের পথচারী, ফুটপাতবাসী বা দুঃস্থদের বিনামূল্যেই চা খাওয়ান রাজেন্দ্র।

debangon chakraborty

Related Articles

Back to top button