Kolkata

স্নাতকোত্তর শিক্ষিত মেয়ে, গতানুগতিক প্রথা ভেঙে খাবার হোম ডেলিভারির কাজ করছেন সঙ্গীতা

বিজ্ঞাপন

শিক্ষিত মেয়ে, সম্মানীয় পরিবার, তা-ও লোকের বাড়ি বাড়ি খাবার ডেলিভারি করছেন এই মেয়েটি। শুনতে তাজ্জব লাগলেও এমনটাই হচ্ছে। প্রতিদিন হচ্ছে। এই কলকাতার বুকেই হচ্ছে। গতানুগতিক ছন্দে বাধা জীবনকে ফুঁৎকারে উড়িয়ে খাবার হোম ডেলিভারিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিলেন রবীন্দ্রভারতীর নাট্য বিভাগের ছাত্রী সঙ্গীতা।

বিজ্ঞাপন

তাঁকে প্রত্যহ শুনতে হয়, “এই নাটক-ফাটক করে মাথাটা একেবারেই গিয়েছে! পরিবারে তো কোনও অভাব নেই। তা-ও কেন রাস্তায় নেমে বাড়ি বাড়ি খাবার দিয়ে আসার কাজ করতে হচ্ছে”। উল্টে সঙ্গীতা জবাব দেন, “আমি থিয়েটার থেকে নৈতিক শিক্ষা পেয়েছি। সেই শিক্ষা আমায় বলে, লোক না ঠকিয়ে যে পেশায় অর্থ উপার্জন করা যায় সেটাই সম্মানের। আমরা খাবার দিয়ে আসি। টেবিলের তলায় টাকা দিয়ে আসি না”।

বিজ্ঞাপন

ছোটো থেকেই অন্যদের থেকে আলাদা তিনি। মেয়েরা যখন পুতুল খেলায় ব্যস্ত, তখন সঙ্গীতা ব্যাট হাতে ছুটত মাঠে। সেই পরিধি এখন অনেকটা বেড়েছে। নাটক নিয়ে পড়াশোনা করার পাশাপাশি চলছে খাবার হোম ডেলিভারির কাজও।

বিজ্ঞাপন

এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সঙ্গীতা জানান যে তিনি আপাতত একা একা ঘুরতে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। আশুতোষ কলেজে ইংরেজি নিয়ে ভর্তি হলেও মাঝপথে ছেড়ে চলে আসেন রবীন্দ্রভারতীতে। কারণ? ওই ইচ্ছা।

বিজ্ঞাপন

তাঁর বাবা পেশায় পুলিশকর্মী। যৌথ পরিবারের মেয়ে তিনি। কন্যাসন্তান বেশি থাকায় কোনওসিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সেভাবে প্রভেদ করা হয়নি। যে কাজ ছেলেরা পারে, সেই কাজ মেয়েরাও পারে, এমনই ধারণা তাঁর পরিবারের। এই কারণে পরিবারের অধিকাংশই সরকারি চাকরি করলেও, সঙ্গীতা বেছে নিয়েছেন অন্য পথ।

অনেক আত্মীয় পরিজন, পাড়ার লোকের থেকে এই কাজ করার জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে, কিন্তু যখন মানুষকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার পর তাদের মুখের হাসিটা দেখেন সঙ্গীতা, তখন সবকিছু ভুলে যান।

বিজ্ঞাপন

বেশ উত্তেজিত হয়েই সঙ্গীতা বলেন, “এক বৃদ্ধ দম্পতির কাছে যখন খাবারের প্যাকেট নিয়ে হাজির হই, তখন তাঁদের আশ্চর্য চোখগুলো আমাকে কাজটা করার অনুপ্রেরণা দেয়। ওই রাতে ওই দম্পতির কাছে আমি যেন তাঁদেরই দূরে-থাকা পুত্র বা কন্যা হয়ে যাই”।

রাতেও কাজ করতে হয় তাঁকে। এই নিয়ে পরিবারের সদস্যরা কেউ অবাক হন আবার কেউ বাহবাও দেন। সঙ্গীতার কথায়, “যে মানুষগুলোর কাছে খাবার পৌঁছে দিই, দেখতে পাই তাঁদের চোখগুলো আনন্দে চকচক করে উঠছে। একটু আগেই হয়ত তাঁরা ওই খাবারের ছবিটা দেখেছেন। সেটা হাতে পেয়ে তাঁদের অনুভূতিটা লক্ষ্য করি। করতেই থাকি। কারণ, আমার নাটক শিখিয়েছে অন্য মানুষকে লক্ষ্য করা মঞ্চের অভিনেতার প্রথম কাজ”।

তবে এসবের মধ্যেও সঙ্গীতা স্বপ্ন দেখেন যে মানুষ একদিন হইহই করে ভিড় জমিয়ে টিকিট কেটে এসে তাঁর নাটক দেখবেন। আলোয় আলোয় ভরে যাবে মঞ্চ। এর মাঝে নিজের সবটা উজাড় করে দেবেন সঙ্গীতা। মানুষের করতালিতে ভরে যাবে চারিদিক। কিন্তু এই প্রথা ভাঙা চলতেই থাকবে। বেঁচে থাকুক প্রথা ভাঙা এই সঙ্গীতারা ও তাদের স্বপ্নরা।

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from Khabor24x7

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading