ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে তাই কোভিড ডিউটি থেকে অব্যাহতি! স্বাস্থ্য দপ্তরের বিরুদ্ধে উঠল গুরুতর স্বজনপোষণের অভিযোগ

রাজ্যে করোনা পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন আগে কয়েকশো ডাক্তারকে আপৎকালীন ভিত্তিতে সরকার নিয়োগ করে করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। এই চিকিৎসকরা কোভিড ডিউটি করার জন্য নিযুক্ত হয়েছেন।গত ২১ অক্টোবর স্বাস্থ্য দফতর ‘হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড’ মারফত ৪৬৬ জন জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসারকে (জিডিএমও) নিয়োগ করে। ঠিক তার পরদিন, অর্থাৎ, ২২ অক্টোবর আর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে আরও ৪০০ জন চিকিৎসককে নিয়োগ করা হয়। কীভাবে স্বাস্থ্য দপ্তর তাদের কি শুধুমাত্র ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ করেছে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এই ব্যাপারে আর কোনো উচ্চবাচ্য কেউ করেননি কারণ এখন চিকিৎসকদের সত্যিই প্রয়োজন।
কিন্তু বর্তমানে বিতর্ক বেঁধেছে অন্য জায়গায়। শর্ত ছিল, প্রত্যেককেই কম-বেশি কোভিড হাসপাতালে ডিউটি করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তিনজন চিকিৎসককে এই ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। যাদেরকে কাজের বাইরে রাখা হয়েছে। আর এই তিনজনের মধ্যে একজন হলেন ডক্টর সাবা হাকিম যিনি কলকাতার পুর প্রশাসক এবং রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কন্যা।
স্বাস্থ্য দপ্তরের থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরও বলা হয় যে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাদের বিভিন্ন কোভিড হাসপাতালে ডিউটিতে নিয়োগ করবেন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে যে ফিরহাদ হাকিম কন্যাকে এসএসকেএম হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিভাগে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরেকজনকে কলকাতার একটি হাসপাতালে এসএনসিইউতে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে এবং তৃতীয় জনকেও কোভিড ডিউটি থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এবার এই নিয়ে মুখ খুললেন বিজেপি যুব মোর্চার সহ সভাপতি তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। তিনি তার ভিডিও বার্তায় অভিযোগ জানিয়েছেন যে কেন ফিরহাদ হাকিম কন্যাকে ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে? তিনি ফিরহাদ হাকিমের কন্যা বলে তার প্রাণের ঝুঁকি আছে? তাহলে বাকি যে ডাক্তাররা কোভিড ডিউটি করছেন তাদের কি প্রাণের কোনো ঝুঁকি নেই? প্রকারান্তরে তিনি মমতা সরকারের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার স্বজনপোষণের দিকটি নিজের এই কড়া ভিডিও বার্তায় মেলে ধরেছেন তরুণজ্যোতি তিওয়ারি।
বস্তুত গোটা ঘটনায় রাজ্যের বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন ক্ষিপ্ত এবং তারা স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলেও স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে কোন সঠিক উত্তর মেলেনি। সাবা হাকিমের ক্ষেত্রে প্রশ্ন আরো বেশি করে উঠছে কারণ স্বাস্থ্য দপ্তরের নিয়মানুসারে এখন কোন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনুযায়ী কোনো জিডিএমওকে নিয়োগ করা হয় না। সাবাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি নো কমেন্টস বলে দায় সেরেছেন। আবার স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের উক্তি, ‘‘গাইনি-অবস্টেট্রিক্সের লোক কোভিড হাসপাতালে গিয়ে কী করবেন? কোনও দুর্নীতি হয়নি।’’
স্বাভাবিকভাবেই তার এই যুক্তিতে হতভম্ব চিকিৎসকরা। কারণ যে কয়েকশো জনকে কোভিদ ডিউটিতে দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে কোভিড ডিউটি করতেই হচ্ছে। সেখানে সাবা হাকিমসহ বাকি দুজন ঠিক কোন যুক্তিতে ছাড় পেলেন এই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।