পোষা কুকুরদের উপর নির্মম অত্যাচারের অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় পশুপ্রেমীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ-মারধর শাসকদলের নেতার, অসহযোগিতা পুলিশের

পথকুকুরদের উপর অত্যাচার বা খাবারে বিষ মিশিয়ে তাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করা, এমন ঘটনা আকছার শোনা যায় নানান প্রান্ত থেকেই। কলকাতাতেও এমন ঘটনার নজির অনেক। তবে বাড়ির পোষা কুকুরের উপর সাধারণত অত্যাচার করার অভিযোগ খুব একটা শোনা যায় না। একটা অবলা প্রাণকে বাড়িতে নিজের ইচ্ছায় পুষে তাকে বা তাদের উপর অত্যাচার কেনই বা কেউ করবেন! কিন্তু ওই মানুষের জাত যে! কখন কী করে বসে। এবার তেমনই এক ঘটনা সামনে এল যেখানে নিজের বাড়ির পোষা কুকুরদেরই দিনের পর দিন ধরে চালানো হচ্ছে অত্যাচার।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি ভিডিও দিয়ে করে একটি লম্বা পোস্ট শেয়ার করেছেন অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়। তিনি একজন পশুপ্রেমীও বটে। তিনি যে ঘটনার কথা শেয়ার করেছেন, তা ঘটেছে যাদবপুর, সেলিমপুরে।
অভিযোগ, ওই অঞ্চলের একটি বাড়িতে একটি ল্যাব্রাডার ও একটি জার্মান শেফার্ড পোষ্য রয়েছে। কিন্তু নামেই তারা পোষা কুকুর। তাদের বাড়িতে রেখেও ঠিকমতো দেখাশোনা করেন না বাড়ির মালিক। দুটি কুকুরকেই রীতিমতো ফেলে রাখা হয় বাড়ির সামনের একটা ছোটো প্যাসেজে। খেতেও দেওয়া হয় না ঠিক করে। এই নিয়ে যখন পশুপ্রেমীরা বাড়ির মালিককে অভিযোগ জানান বা প্রতিবাদ করেন, তখন ঘটে এক বিপত্তি।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবাদ করার জেরে ওই বাড়ির মালকিন রীতিমতো হুমকি দিচ্ছেন প্রতিবাদী তরুণ-তরুণীদের। তাঁর কথায়, তাদের কুকুর, তারা বুঝে নেবেন। শুধু তাই-ই নয়, ওই বাড়ির মালিক অর্নব ব্যানার্জী যিনি কী না শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত, তিনি এক পশুপ্রেমীদের উদ্দেশে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এমনকি, এক তরুণকে মারধরও করেন।
যখন তাঁকে বলা হয় যে পুলিশের খবর দেওয়া হবে, তখন ওই লোকটি সাফ কোনও ভয় ছাড়াই বলেন যা খুশি তাই করে নিতে। এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীতে পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। কিন্তু ওই বাড়ির মালিককে কিছু বলার বা আটকানোর ক্ষমতা যেন তাদেরও ছিল না। তাহলে কী ধরে নেওয়া যেতে পারে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেই পুলিশও ওই লোককে সমীহ করে চলছে? তেমনই প্রশ্ন অবশ্য উঠেছে নেটিজেনদের মধ্যে ভিডিও দেখার পর।
জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় গড়ফা থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কোনওরকম সহযোগিতা দেখায় নি এই ঘটনায়। উল্টে তারা চাপ দিয়েছেন যাতে এই অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়। তবে তাও পশুপ্রেমীদের চাপে পড়ে তারা অভিযোগ দায়ের করেন বটে তবে আদতে তারা কতটা কী পদক্ষেপ করবেন, তা নিয়ে ওই পশুপ্রেমীরা থেকে অভিনেতা সকলেই সন্দিহান।
এই খবর সামনে আসার পর ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে শিল্পীজগতের কিছু মানুষ থেকে শুরু করে পশুপ্রেমীরা। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়কে বলেছেন অভিযোগ জমা দেওয়া জন্য। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, একজন নেতার এমন সাহস হয় কী করে যে তিনি অন্য একজনের গায়ে এভাবে হাত তুলতে পারেন? আর তিনি ঠিক কতটা প্রভাবশালী হলে তবে পুলিশও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে চায় না। এমন চললে তো পুলিশ-প্রশাসনের উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা উঠে যাবে, এমনটাই দাবী নেটিজেনদের। আর কতদিন চলবে শাসকদলের এই ‘দাদাগিরি’?