যুগান্তকারী রায় সুপ্রিম কোর্টের, পৈতৃক সম্পত্তিতেও থাকবে মেয়েদের সমান অধিকার
পৈতৃক সম্পত্তিতে সমানাধিকার নিয়ে মহিলাদের আর কোনো বাধা রইল না। উত্তরাধিকার আইনের সংশোধনীতে সম্পত্তির অধিকারের পুরুষের সঙ্গে হিন্দু মহিলাদের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও তার প্রয়োগ নিয়ে সংশয় ছিল। মঙ্গলবার এই সংশয় দূর করে দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ২০০৫ সালের সংশোধিত উত্তরাধিকার আইন তৈরির আগে বা পরে, যখনই বাবার মৃত্যু হোক না কেন তার সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাবেন মৃত ব্যক্তির কন্যা সন্তান। পুরুষ ও মহিলা, উভয়ের সমানাধিকারের পক্ষে সওয়াল করেই বিচারপতি অরুণ মিশ্রর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ রায় দিয়েছে, “কন্যা সন্তান সারা জীবনই প্রিয় থাকেন, তিনি চিরকালই বাবার প্রিয় কন্যা। মেয়েরা তাদের বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবেন, বাবা জীবিত থাকলেও পাবেন, না থাকলেও পাবেন। বাবা বেঁচে আছেন না নেই, সেই বিষয়টি এইক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক। মেয়ে মানে সে সব সময়েই মেয়ে — ওয়ান্স আ ডটার অল ওয়েজ আ ডটার”। বিচারপতি মিশ্রর এই রায়ের সঙ্গে একমত হয়েছেন তার বেঞ্চের অপর দুই সহযোগীও।
দীর্ঘদিন ধরেই হিন্দু যৌথ পরিবারের সম্পত্তির বিভাজন ও অধিকারের প্রশ্নে অনেক আইনি জটিলতা ছিল। এর আগে ২০০৫ সালে হিন্দু উত্তরাধিকার (সংশোধনী) আইন কার্যকর হয়। সেই আইনের বিষয়েই মঙ্গলবার এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। এর আগের আইনে বলা হয়েছিল ২০০৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বরের আগে যদি বাবা ও মেয়ে উভয়েই জীবিত থাকেন, একমাত্র তাহলেই পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার থাকবে। তবে মঙ্গলবার দেশের শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিল ২০০৫ এর ৯ সেপ্টেম্বর বা তার আগেও যদি বাবার মৃত্যু হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রেও মেয়েদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
এর আগে উত্তরাধিকার আইনের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছিল ২০১৫ সালে প্রকাশ বনাম ফুলবতী এবং ২০১৮ সালে সুমন সুরপুর বনাম অমর মামলার মারফৎ। এই দুই মামলাতেই পরস্পর-বিরোধী রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রকাশ বনাম ফুলবতী মামলায় শীর্ষ আদালতের বিচারপতি অনিল আর দাভে এবং বিচারপতি এ কে গোয়েলের বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, মেয়েদের জন্ম যখনই হয়ে থাকুক না কেন ২০০৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যদি তারা বেঁচে থাকেন, একমাত্র তাহলেই পৈতৃক সম্পত্তির ওপর তাদের অধিকার থাকবে। অন্যথায় তাদের অধিকার থাকবে না। কিন্তু সুমন বনাম অমর মামলায় বিচারপতি এ কে সিক্রি ও বিচারপতি অশোক ভূষণের বেঞ্চ রায় দেয় ২০০১ সালে বাবার মৃত্যু হলেও, তাঁর সম্পত্তির ওপর দুই মেয়ের অধিকার থাকবে। ২০০৫ সালের আইন সংশোধনের পর যেটুকু জটিলতা ছিল তা এদিনের রায়ের পর যাবতীয় দ্বন্দ্ব দূর করে দিল। আশা করা যায় শীর্ষ আদালতের এদিনের রায় মহিলাদের বাড়তি সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেবে।
প্রতিবেদনটি লিখেছেন : অন্তরা ঘোষ