দেশ

সমুদ্রে ভেসে এল সোনালি রথ! কোথা থেকে এল এই রথ? তাহলে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ থেকে বাঁচাতেই কোনও দৈব সংকেত?

রথযাত্রার আর বেশিদিন বাকি নেই। পুরীর মন্দিরে এখন থেকেই সাজো সাজো রব, বাংলাতেও প্রস্তুতি তুঙ্গে। প্রভু জগন্নাথদেবের রথযাত্রা বলে কথা, যে সে উৎসব তো আর নয়। তবে রথযাত্রার আগেই ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে অন্ধ্র উপকূলে ঘটে গেল এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। অন্ধ্র উপকূলে ভেসে এল এক সোনালি রথ। কোথা থেকে এই রথ এসেছে, তা কারোর জানা নেই।

তবে সমুদ্রে এভাবে গোটা রথ ভেসে আসার সঙ্গে পৌরাণিক এক ইতিহাসের ইঙ্গিত মিলছে। পদ্মপুরাণ অনুযায়ী, মালবরাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন বিষ্ণুর পরম ভক্ত। শ্রীক্ষেত্রের আদি মন্দির তাঁরই গড়া। তবে তখনও সেই মন্দিরের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা হয়নি। এমন সময় রাজা খবর পেলেন নীলমাধব বিগ্রহের কথা। নীলমাধব বিষ্ণুর অন্য এক রূপ। কিন্তু সেই বিগ্রহ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

রাজার নির্দেশ সকলেই সেই নীলমাধবের বিগ্রহ খুঁজতে অস্থির হয়ে পড়লেন। কিন্তু কেউই তা না পেয়ে ফিরে এলেন। ফিরলেন না শুধু বিদ্যাপতি। তিনি বিগ্রহের খোঁজে গেলেন জঙ্গলের মধ্যে। সেখানে পথ হারালেন তিনি। তাঁকে পথ চিনিয়ে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে এলেন শবররাজ বিশ্ববসুর কন্যা ললিতা।

ধীরে ধীরে ললিতার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিদ্যাপতির। তাঁকে বিবাহ করে জঙ্গলের মধ্যেই সংসার শুরু করেন তিনি। বিদ্যাপতি লক্ষ্য করেছিলেন যে তাঁর শ্বশুরমশাই প্রতিদিন সকালে স্নান করে কোথাও একটা যান। ললিতার কাছে জানতে চাওয়ায় তিনি জানান যে গভীর জঙ্গলে রয়েছে নীলপর্বত। তাঁর সেই পর্বতের অধিষ্ঠিত হলেন নীলমাধব।

নীলমাধবের কথা শুনেই বিদ্যাপতির মনে পড়ে গেল তিনি কী উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন! বিশ্ববসুর সঙ্গে গিয়ে শেষমেশ নীলমাধবের দর্শন পেয়ে ভক্তিভরে পুজো করল বিদ্যাপতি। ঠিক সেই সময় আকাশ থেকে দৈববাণী শোনা গেল, “এতদিন দীন-দুঃখীর পুজো নিয়েছি, এইবার মহা-উপাচারে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের পুজো নিতে চাই”। সেই খবর সত্বর জানানো হল রাজা  ইন্দ্রদ্যুম্নকে। হঠাৎ এই আনন্দের খবরে তাঁর সে কি বিস্ময়!

কালবিলম্ব না করে রাজা হাজির হলেন জঙ্গলের মাঝে। কিন্তু নীলমাধব কোথায়? তাঁকে আর দেখা যায় নি। খোঁজ শুরু হওয়ার পর ফের দৈববাণী শোনা গেল, “সমুদ্রের জলে ভেসে কাঠ আসবে, তাতে আমার (নীলমাধবের) মূর্তি তৈরি করো”। সবাইকে অবাক করে দিয়েই একদিন সত্যিই সমুদ্রের জলে ভেসে এল কাঠ। রাজার নির্দেশে মহাসমারোহে সেই কাঠ দিয়ে বিগ্রহ তৈরি করতে লেগে পড়ল সবাই। কিন্তু এ তো আর যে সে কাঠ না। ছেনিই বসতে চায় না কাঠে।  ইন্দ্রদ্যুম্ন পড়লেন বিপদে।

সেই সময় জগন্নাথ নিজে এলেন শিল্পীর বেশে। তিনি জানান যে মূর্তি তিনিই গড়বেন। কিন্তু তাঁর একটি শর্ত রয়েছে। তিন সপ্তাহ লাগবে তাঁর মূর্তি গড়তে আর এই সময় কেউ মূর্তি দর্শন বা মূর্তি গড়ার ঘরে প্রবেশ করতে পারবেন না। সকলে রাজি হলেও রানী গুন্ডিচা কৌতূহল ধরে রাখতে পারলেন না। মূর্তি তৈরির ঘরে আড়ি পেতে শোনেন তিনি। কিন্তু কোনও শব্দ না পাওয়ায় দরজা খুলে দেন রানী।

তখনই উধাও হয়ে যান কারিগর। আর মূর্তি পড়ে থাকে অর্ধেক বানানো অবস্থায়। রাজা-রানী, সকলেই অনুশোচনায় ভেঙে পড়েন। সেই সময় স্বপ্নাদেশ দেন প্রভু জগন্নাথ। জানান, এসব পূর্বপরিকল্পনা। তিনি জানান যে তিনি এই রূপেই পুজো নিতে চান। এই বিগ্রহই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে পুরীর মন্দিরে।

মানুষের বিশ্বাস, পূর্বে যেমন সমুদ্রে বিগ্রহ তৈরির জন্য কাঠ ভেসে এসেছিল, ঠিক তেমনই এবছর এই সোনালি রথ ভেসে এসেছে। অনেকেই মনে করছেন, পৌরাণিক পালে হাওয়া দিতেই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় অশনির সৃষ্টি। এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে অন্ধ্র ও ওড়িশা উপকূলে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল। বাংলার উপকূলেও এর প্রভাব পড়তে পারত। তবে সেই ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর জেরে হচ্ছে বৃষ্টি।

তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্রেই গত মঙ্গলবার একটি রহস্যময় স্বর্ণালি রথ দেখতে পান স্থানীয়রা। অন্ধ্রের শ্রীকাকুলামে সুন্নাপল্লি বন্দরের কাছে এই রথটি দেখতে পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে কৌতূহলী জনতা রথটিকে ঠেলে সমুদ্রতটে নিয়ে আসে। শ্রীকাকুলাম জেলার নৌবাহিনীর সাব-ইনস্পেক্টর জানান, “অন্য কোনও দেশ থেকে ভেসে আসতে পারে এই রথ। আমরা তদন্তের ব্যবস্থা করেছি এবং উপরমহলেও জানানো হয়েছে।” তবে রথযাত্রার দিনকতক আগেই এই রথ ভেসে আসার ঘটনায় ফের পদ্মপুরাণের ঘটনা স্মরণ করছেন ভক্তেরা। 

Related Articles

Back to top button