ভেড়া চুরি! তাই যুদ্ধের বার্তা চীনের! ৮০০ ভেড়া সঙ্গে নিয়ে চীনাদূতাবাসে সটান হাজির হয়ে ছিলেন বাজপেয়ী!

প্রবাল দাশগুপ্ত’র নতুন বই ‘ওয়ারশেড ১৯৭৬’ জানাচ্ছে এক অজানা রাজনীতির গল্প! বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ১৯৬৫ সালে প্রতিবেশী দুই দেশের কূটনীতি। সবে মাত্র তিনটি বছর কেটেছে চীনা আগ্রাসনের। সাল ১৯৬৫। তখনও মজ্জায় মজ্জায় টাটকা চীন-ভারত যুদ্ধের ক্ষত। কিন্তু তিনটে বছর কাটতে না কাটতেই আবারও ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিল চীন।
যুদ্ধের পিছনে ভারতের বিরুদ্ধে চীনের অভিযোগ ভারতীয় সেনারা নাকি চীনের ৮০০টি ভেড়া আর ৫৯টি ইয়াক চুরি করেছে। এখন যেমন চীন বিশ্বের কাছে দুর্বোধ্য কয়েক দশক আগেও তেমনই ছিল।আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনীতিতে তারা কি চায় বা কী করবে, কী করতে পারে তা আজ করতে পারা কোন দেশের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এখনও যে সেটা নেই তা বলাই বাহুল্য।
কিন্তু এই দুর্বোধ্য চৈনিক রাজনীতিবিদদের মুখের উপরে সপাট জবাব দিয়েছিল ৪২ বছরের উদীয়মান রাজনীতিবিদ অটল বিহারি বাজপেয়ী। কূটনৈতিক এবং সামরিক দুই দিক দিয়েই ভারতকে নাস্তানাবুদ করতে চেয়েছিল প্রতিবেশী এই শত্রু রাষ্ট্র। সেইসময় বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছিল লাল ফৌজ। তাই নানান কূটনৈতিক জালে ভারতে ব্যস্ত রাখতেই একাধিক ভিত্তিহীন অজুহাত খাড়া করেছিল। অন্যদিকে সেইসময় ভারত আবার সেই সময় ব্যস্ত পাক সীমান্তে পাক হানাদের রুখতে। কিন্তু শত মধ্যেও চীনের তোলা হাস্যকর মন্তব্যগুলির বিরোধিতা করেছিল ভারত।
কিন্তু চীনের এই অভিযোগের সমুচিত জবাব দিতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন তরুণ রাজনীতিবিদ অটল বিহারী বাজপেয়ী। রাজ্যসভার সাংসদ বাজপেয়ী সেপ্টেম্বর মাসে ৮০০টি ভেড়ার নিয়ে সরাসরি হাজির হন দিল্লিতে অবস্থিত চীনের সহকারী দূতাবাসে। আর প্রতিটি ভেড়ার গলায় ঝোলানো একটি প্ল্যাকার্ড। লেখা, ‘আমাকে খাও কিন্তু বিশ্বকে রক্ষা কর’ । বাজপেয়ীর এই কর্মকাণ্ডে রীতিমত হতবাক হয়ে যান তৎকালীন চীনা রাষ্ট্রদূতের অফিসের কর্মীরা। উল্টে চিনও জানিয়েছিল বিষয়টি খুবই আপমানজনক। তাঁদের অভিযোগ ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সমর্থনেই এই কাজ করেছেন বাজপেয়ী। সরকারের সমর্থন ছাড়া এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব নয় বলেই বিবৃতি দিয়ে জানান হয়েছিল।
কিন্তু তৎকালীন দিল্লিবাসীও অটলবিহারী বাজপেয়ীকে পুরোপুরি সমর্থন জানিয়েছিলেন। কয়েকজন নাগরিকও এই মিছিলে সামিল হয়েছিলেন। তাঁরা দাবি করেছিলেন এই বিক্ষোভ মিছিলের সঙ্গে ভারত সরকারের কোনও যোগাযোগ নেই। এটি স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণ মিছিল। চিনের দেওয়া হুঁশিয়ারির বিরুদ্ধে দিল্লিবাসীর প্রতিক্রিয়া বা প্রতিবাদ। পাশাপাশি তাঁরা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দেওয়া বন্ধ করার পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন।
প্রসঙ্গত চীনের ভেড়া আর ইয়ার্ক চুরির অভিযোগের কেন্দ্র ছিল তিব্বত। তাঁদের অভিযোগ ছিল চার তিব্বতী বাসিন্দাকে ভারত অপহরণ করেছে। কিন্তু ভারতের দাবি ছিল তাঁরা শরনার্থী। যেসময় দেশে ফিরতে চাইবে সেই সময়ই তাঁদের সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পালিয়ে আসা ২ তিব্বতী মহিলার অভিযোগ ছিল চীনা সেনা তাঁদের ওপর নির্মম অত্যাচার করেছে। ভারত সেই সময় স্পষ্ট করে জানিয়েছেন ইয়র্ক সম্পর্কে তাঁদের কিছুই জানা নেই। কিন্তু ২ চীনা মেশপালক ভারতের শরনার্থী। তাঁদের সঙ্গেই রয়েছে ভেড়ার দল। তাঁরা যদি ফেরত যেতে চান তাহলে তাঁদেরও ফেরত পাঠান হবে।
কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি বাজপেয়ীর এই চাল চীনকে যে কিছুটা হলে অপমানজনক অবস্থায় ফেলেছিল তা বলাই বাহুল্য। সেইসময়ে সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলেও বাজপেয়ীর এই কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন যাবৎ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল।