শুধু ভারত না, পাকিস্তানেও তিনি বিখ্যাত। আজ কার্গিল যুদ্ধের নায়ক বিক্রম বত্রার প্রয়াণ দিবস! যাঁর বীরত্ব আজও প্রভাবিত করে সেনাবাহিনীকে!
তাঁর বীরত্বের গাথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসের পাতায়। আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে ঘটে যাওয়া কার্গিলের যুদ্ধে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ বলিদান দেন এই বীর। ৫১৪০ নম্বর পোস্টে কবজা করার পর ‘ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর” বলে সর্বোচ্চ বলিদান দিয়েছিলেন ভারত মাতার এই বীর সন্তান ।
হ্যাঁ, ভারতবাসী আজও মনে রেখেছে আপনাকে। আজীবন রাখবে। দেশের প্রতিটি মানুষের মনে আজও এই বীর সৈনিক চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। আজকের দিনেই কার্গিলের রণভূমিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বীর জওয়ান। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে জেনে নিন তাঁর সম্পর্কে কিছু তথ্য।
২০ বছর আগে আজকের দিনে ৭ই জুলাই ১৯৯৯ পাকিস্তানেের সঙ্গে ভারতের ঘটে যাওয়া কার্গিলের ভয়ানক যুদ্ধে নিজের সঙ্গী সেনা অফিসারদের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি নিজের প্রাণ ত্যাগ করেন। তার এই বীরত্ব এবং স্বার্থত্যাগে মুগ্ধ হয়ে যায় ভারত ।
কথিত আছে কার্গিল যুদ্ধের আগে বিক্রম বত্রা ছুটিতে নিজের বাড়ি পালমপুর গেছিলেন, আর সেখানে বন্ধুদের ট্রিট দিতে নিয়ে গেছিলেন ন্যুগাল ক্যাফেতে । তাঁর বন্ধুরা তাঁকে বলেনসেনাতে সে যেন সাবধানে থাকে। এই প্রশ্নের উত্তরে বিক্রম বলেন আমাকে নিয়ে চিন্তা করোনা, আমি জিতে দেশের তেরঙ্গা উড়িয়েই আসব, আর ভারত মাতার জন্য শহীদ হওয়াটাও সৌভাগ্যেরই ব্যাপার।
ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রার প্রেম কাহিনীও একই রকম আবেগে ভরপুর। বিক্রম একটি মেয়েকে ভালবাসত। দুজনের প্রথম দেখা ১৯৯৫ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে দুজনেই ইংরেজিতে MA এর পড়াশুনা করছিলেন। দুজনের মধ্যে তৈরি হয় গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হয়। সেই বন্ধুত্বই বদলে যায় ভালোবাসায়।
এরপর ১৯৯৬ এ বিক্রমের ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে সিলেকশন হয়। কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে বিক্রম চলে যান দেরাদুনে। বিক্রম নিজের সিলেকশন নিয়ে খুবই খুশি ছিলেন। কিন্তু ওঁর প্রেমিকা জানত যে, বিক্রম দূরে চলে গেলে তাঁদের সম্পর্কেও দূরত্ব আসবে। এরই মাঝে ঘটে যায় কার্গিল যুদ্ধ। যুদ্ধ শেষে প্রেমিকাকে বিয়ে করবে বলে জানিয়েছিলেন বিক্রম। কিন্তু না তা আর হয়নি।
বিক্রমের প্রেমিকা তখনকার দিনের কথা মনে করে বলেন, ‘সে আর ফিরে আসেনি, গোটা জীবনের জন্য আমাকে শুধু স্মৃতি গুলো দিয়ে চলে গেছে।” একটি ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারে উনি বলেছিলেন, বত্রা দেশের সেব্য লেগে পরেছিল আর মিশনের জন্য অনেক অনেক দিন পর্যন্ত তাদের কথা হত না। বিক্রমের প্রেমিকা বলে, ‘আমাকে ও সবসময় বিয়ের কথা বলত।”
বিক্রমের প্রেমিকা বলে, একসময় আমি ওকে বিয়ের কথা বলি, কারণ আমার বাড়ি থেকে খুব চাপ দেওয়া হচ্ছিল। এরপর বিক্রম কিছু না শুনেই একটি ব্লেড দিয়ে নিজের আঙুল কেটে আমার সিঁথি ভরে দেয়। এরপর আমি বিক্রমকে বলি এটা পুরো সিনেমার মতো হল। প্রেমিকা বলে, আমার আফসোস হল যে তাঁর কৃতিত্ব এবং আনন্দময় মুহুর্তগুলি স্মরণ করার জন্য আমার ভালোবাসা আমার সাথে ছিলোনা। আজ আমাদের কাছে অনেক প্রেম কাহিনীই আছে, কিন্তু বিক্রমের মতই কোন ভারতীয় সেনা জওয়ানের প্রেম কাহিনী আমাদের চোখে জল এনে দেয়।
বিক্রম বত্রাকে মরণোত্তর পরমবীর চক্রে সম্মানিত করা হয়। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই তিনি দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ বলিদান দেন। হিমাচল প্রদেশের পালমপুরে ১৯৭৪ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিক্রম বত্রা। ১৯ জুন ১৯৯৯ সালে বিক্রম বত্রার নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানিদের কাছ থেকে ৫১৪০ নং পোস্ট ছিনিয়ে নেয়। ওই পোস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর স্ট্যাটের্জিক ছিল।
ওই পোস্ট থেকে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীরা ভারতীয় সেনার উপর গুলি চালাচ্ছিল। আর এই পোস্টে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করার পর বিক্রম ৪৮৭৫ নং পোস্ট জয়ের জন্য চলে যান। ওই পোস্ট সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় ছিল ।
৭ই জুলাই ১৯৯৯ সালে এক আহত অফিসারকে বাঁচাতে গিয়ে বিক্রম বত্রা নিজে প্রাণ ত্যাগ করেন। ওই অফিসারকে বাঁচানোর সময় ক্যাপ্টেন বত্রা বলেছিলেন, “”তুমি চলে যাও, তোমার বৌ-বাচ্চা আছে।”
বিক্রম বত্রার সঙ্গী অফিসার নবীন ওঁর সাথেই বাঙ্কারে ছিল। নবীন বলেন, আচমকাই একটি বোমা আমাদের পাশে এসে ফেটে যায়। আমি আহত হয়ে গিয়েছিলাম। বিক্রম তখনই আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরফলে আমি বেঁচে যাই, কিন্তু বিক্রম আর ফিরে আসেনা। দেশের মাটি রক্ষা করতে গিয়ে সে নিজের প্রাণ দিয়ে দেয়। ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রার বীরত্বের কাহিনী শুধু ভারতেই না, পাকিস্তানেও বিখ্যাত। পাকিস্তানে সেনা তাঁকে “শেরশাহ” বলে অভিহিত করে।