শুধুমাত্র ফুসফুস-লিভারই নয়, কিডনিরও ক্ষতি করে কোভিড ভাইরাস
গত দেড় বছরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। বেশিরভাগ মানুষই এই ভাইরাসকে জয় করতে পারলেও কেউ কেউ হার মেনেছেন। তবে করোনা মুক্ত হয়েও কেউ কেউ আবার সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেন নি। করোনা ফুসফুসে ক্ষতি তো করেইছে, তবে এবার কিডনির দিকেও হাত বাড়িয়েছে এই মারণ ভাইরাস। সম্প্রতি, এমনই তথ্য উঠে এসেছে আমেরিকান সোসাইটি অফ নেফ্রোলজির এক রিপোর্টে।
আমেরিকান সোসাইটি অফ নেফ্রোলজির এই রিপোর্টে জানা গিয়েছে যে এই উপসর্গ ব্যাথাহীন তাই কিডনির সমস্যা বুঝতে অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে। আমেরিকান সোসাইটি অফ নেফ্রোলজির গবেষকদের দাবী, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও অনেকেই কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। জানা গিয়েছে, কিডনির এই সমস্যা এমন অবস্থায় ধরা পড়ছে যে তা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে করোনার পর ডায়ালিসিসের রোগী বেড়েছে আট শতাংশ। তবে শুধু আমেরিকান সোসাইটি অফ নেফ্রোলজির রিপোর্টই নয়, এর আগেপ করোনা পরবর্তীতে কিডনির বিপদ সামনে আসার সম্ভাবনা প্রকাশ করেছিল ক্লিনিকাল জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান সোসাইটি অফ নেফ্রোলজি। সেখানে বলা হয়, শুধুমাত্র ফুসফুস বা লিভার নয়, করোনা ক্ষতি করছে কিডনিরও। ৫,২১৬ জনের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে যে ১,৬৫৫ জনের মধ্যে অ্যাকিউট কিডনির সমস্যা দেখা দিয়েছে।
গণদর্পণের প্রতিষ্ঠাতা ব্রজ রায়ের মরদেহে প্যাথলজিক্যাল অটোপসি করার পর দেখা যায় করোনার হানায় একাধিক পরিবর্তন হয়েছিল তাঁর কিডনিতেও। এ বিষয়ে চিকিৎসক কাজলকৃষ্ণ বণিকের প্রতিক্রিয়া, “যখন সংক্রমণটা অ্যাকটিভ কেস হিসাবে আছে, তার তুলনায় অনেক বেশি প্রভাব ফেলছে পোস্ট কোভিডে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে আমাদের হৃদপিণ্ড, কিডনি, কোনও কোনও ক্ষেত্রে যকৃৎয়েও। আমাদের নার্ভাস সিস্টেমও বাদ যাচ্ছে না। এর সপক্ষে একাধিক বৈজ্ঞানিক তথ্যও গবেষণায় উঠে এসেছে। কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর অন্তত ৬ মাস সাবধানতা অবলম্বন করে চলতেই হবে”।
করোনায় মৃতদের অটোপসি করিয়ে নানান প্রয়োজনীয় অথচ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসতে পারে বলে মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। এই কারণে পোস্ট করোনা ক্লিনিকেও নজরদারি প্রয়োজন। করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও রোগী পুরোপুরি সুস্থ কী না তাও নজরে রাখা প্রয়োজন।
করোনা মুক্ত হয়েও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সুরক্ষার খাতিরে প্রয়োজনীয় কিছু শারীরিক পরীক্ষাও করিয়ে নেওয়াও প্রয়োজন। করোনাকাল কাটলেও শরীরকে খুব একটা স্ট্রেস দেওয়া উচিত নয়। চিকিৎসকদের পরামর্শ, অন্তত ১৫ দিন ঘরে বিশ্রাম নিতে পারলে থেকে ভাল। পাশাপাশি করোনা-মুক্ত হলেও মাস ছ’য়েক নজর রাখতে হবে শরীরের দিকে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।