বছর ৮৫-এর রতন টাটার বন্ধু বছর ২৮-এর এক শান্তনু নায়ডু, কে এই তরুণ? কীভাবে গড়ে উঠল দুই অসমবয়সীর মধ্যে বন্ধুত্ব?

গত ২৮শে ডিসেম্বর ছিল প্রখ্যাত ব্যবসায়ী রতন টাটার জন্মদিন। কোনও জাঁকজমক নয়, বরং একটি ছোট্ট কাপ কেক কেটে নিজের জন্মদিন উদযাপন করেন তিনি। এদিন রতন টাটা তো বটেই, এরই সঙ্গে নজর কাড়ে তাঁর পাশে থাকা ঝাঁকরা চুলের এক যুবক। কে এই যুবক? রতন টাটার সঙ্গে কীভাবে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল তাঁর? এ নিয়ে উঠেছে নানান প্রশ্ন।
জানা গিয়েছে, ওই যুবকের নাম শান্তনু নায়ডু। পুনের বাসিন্দা তিনি, পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। টাটা পরিবারের সঙ্গে পুরনো জানাশুনা থাকলেও, শান্তনুর পরিবারের কেউ কোনওদিন টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করে নি।
শান্তনু এক জুনিয়র ইঞ্জিনিয়র হিসেবে টাটা এলেক্সিতে কাজ করা শুরু করে। তবে তখন রতন টাটার চোখে পড়ে নি সে। শান্তনু এক পশুপ্রেমী। রাতে ডিউটি থাকত তাঁর। সে লক্ষ্য করেছিল তাঁর অফিস চত্বরে প্রায়ই কুকুররা গাড়ি চাপা পড়ে মারা যায়। আর সেই ঘটনাগুলি ঘটত রাতের দিকেই।
শান্তনু গাড়িচালকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে গাড়ি চালানোর সময় অন্ধকারে কুকুরগুলিকে দেখতে পায় না চালকরা। এই কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
এই সমস্যার সমাধান করতে শান্তনু ঠিক করেন রাস্তার কুকুরদের আলো জ্বলা কলার পরানো হবে। যাতে রাতের অন্ধকারেও তাদের দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কলার বানাবে কে? কেই বা পরাবে? অফিসের কাজ সামলে একার পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব নয়।
এই সমস্যারও সমাধান বের করে ফেলেন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার। রাস্তার কুকুরদের দেখভালের জন্য সমমনস্কদের নিয়ে তৈরি করে ফেলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘মোটোপজ’। এই ‘মোটোপজ’-ই জীবন বদলে দেয় শান্তনুর।
অন্ধকারে জ্বলে এমন কাপড় দিয়ে তৈরি হয় কুকুরদের কলার। এই ঘটনা শান্তনুর সংস্থা এলেক্সির নিউজলেটারে জায়গা করে নেয়। তখনই এই ঘটনা নজরে পড়ে রতন টাটার। নিজেও তিনি পশুপ্রেমী। তিনি শান্তনুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর সেই সংস্থাকে অর্থ সাহায্যও করেন তিনি। সেই থেকে শুরু তাদের কথাবার্তা। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে কথা হতে হতে তা ভালো বন্ধুত্বের পরিণত হয়।
এর কিছুদিন পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার জন্য টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয় শান্তনুর। তিনি ভর্তি হন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানকার ছাত্র ছিলেন রতন টাটা নিজেও। তাঁর স্নাতক হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে শান্তনুকে কাজ করার প্রস্তাব দেন রতন টাটা। শুরু হয় দুই অসমবয়সী মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব।
শান্তনু রতনের অফিসের কাজে নিয়মিত সাহায্য করেন। আবার ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের কোথায় কোন হ্যাশট্যাগ দিতে হবে, কোন ইমোজির মানে কি, এ সব ব্যপারেও বন্ধুকে চোস্ত করে তোলেন সময় পেলেই।
রতন টাটার সম্পর্কে তরুণ বলেন, “ওঁর অফিসে আসার আগে আমি সমস্ত মিটিংয়ের নোট নিই। যাতে পরে বিষয়গুলি নিয়ে ওঁর সঙ্গে আলোচনা করতে পারি। তার পর উনি যখন অফিসে আসেন আমি আমার পরিকল্পনা ওঁকে জানাই উনি নিজের পরিকল্পনা আমাকে জানান। তার পর আমরা এক সঙ্গে এক একটি লক্ষ্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি”।
মোটোপজের মতোই আরও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে শান্তনুর। তেমনই একটি চেষ্টার নাম ‘গুড ফেলো’। তাঁর আর রতনের মতোই বয়স্কদের সঙ্গে সমমনস্ক কমবয়সিদের জোড়ার ভাবনা। যাতে দু’পক্ষই ভাল থাকেন। একে অপরের সংস্পর্শে সমৃদ্ধ হন।
শান্তনু সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আমাদের একই বিষয়ে আগ্রহ ছিল। সেই থেকেই আলাপ। তবে শান্তনুর যে বিষয়টা আমার ভাল লাগে তা হল ওর সজীবতা। সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে ওর উদ্বেগ। স্বজাতিকে টেনে নামানোর পৃথিবীতে এমন ভাবনা চিন্তা আজকাল খুব কমই দেখা যায়”।
রতন টাটাকে নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি বই লিখে ফেলেছেন শান্তনু। সেই বইয়ের নাম ‘আই কেম আপন আ লাইটহাউস’। বন্ধু রতন টাটার সঙ্গে তাঁর নানান মুহূর্তের কথা, তাঁদের দু’জনের বন্ধুত্বের কথা এই বইতে লিখেছেন শান্তনু। তবে এটিকে বই না বলে ডায়েরি বলাই ভালো।