রবির জলে রবির পুজো; ১৫৯ বছরে কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য
হে নূতন দেখা দিক আর-বার জন্মেরও প্রথম শুভক্ষণ… ১৮৬১ সালের ৭ই মে (২৫শে বৈশাখ) পৃথিবীতে এরকমই এক শুভক্ষণ এসেছিল। তা জীবন্ত বাস্তব ছিল ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট (২২শে শ্রাবণ) পর্যন্ত। তবুও এই শুভক্ষণের রেশ চিরসবুজ। আমাদের বাংলা চির ঋণী এই শুভক্ষণ এই বঙ্গদেশেই এসেছিল। এতক্ষণে বোঝাই যাচ্ছে, কার কথা বলছি। তিনি প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু বাঙালিরা পঁচিশে বৈশাখ উদযাপন করতেই ভালবাসে তাই আজ ৮ই মে তাঁর জন্মের শুভক্ষণ গোটা বিশ্বে পালিত হবে, তিনি যে বিশ্বকবি।
তাঁকে নিয়ে নতুন করে বলার তো কিছু নেই। গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো করেই তো দিন কাটে বাঙালির। তাঁর জীবনী উল্লেখ করে রচনা লেখা এ লেখার তো উদ্দেশ্য নয়। তাঁর প্রভাব যে কতভাবে এই কঠিন পরিস্থিতিতেও কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তিনি যে কতটা দূরদর্শী তা নিয়ে কিছুটা লিখলে বোধহয় মনের ভার কিছুটা লাঘব হবে।
যে মানুষটি তাঁর নিজের জন্মদিনে অসম্ভব সুন্দর একটি গান লিখতে পারেন যেখানে ‘চিরনূতনেরে দিল ডাক, পঁচিশে বৈশাখ’ লাইনটিই নতুন শুরুর কথা বলে যেখানে যাঁর জন্মদিন সে নিজেই চিরনতুনকে আহ্বান জানাচ্ছে। মানে কতটা সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা মানুষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি যা গান লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন শুধু ওইটুকুর জন্যই তিনি সারি সারি নোবেল পেতে পারতেন। বাকি শিল্পকর্ম ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা নাই বা উল্লেখ করা হল। নাটক, ছোটগল্প, উপন্যাস, কবিতা; সবেতেই যেন তাঁর অবাধ বিচরণ। সাহিত্যের এই বিভাগগুলি যেন তাঁর অপেক্ষাতেই ছিল। একটা গোটা জাতির শিরদাঁড়া সোজা করে দিয়েছিলেন এই মানুষটি। কী আছে আমাদের তিনি ছাড়া? সবেতেই তো রবির প্রতিচ্ছবি।
‘অচলায়তন’ ভাঙার দুঃসাহস রবীন্দ্রনাথই দেখিয়েছিলেন। বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠা করে ছাত্র-ছাত্রীদের খোলা হাওয়ায় পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করে তিনি ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশ্বের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন।
সে প্রেম হোক কি দুঃখ, রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি সদা বিরাজমান। ‘চোখের মাঝে দেখেছিলেম চোখের বাহিরে’ এই লাইনের মর্মার্থ বুঝতে এক একজনের সারাজীবন চলে যায়। তার পূজাপর্বের গান শুনলে মনে হয় নিজের প্রেমাস্পদকেই তো ডাকছি। তিনি যে প্রেমিকের মাঝেই ভগবানকে বসিয়েছিলেন। আজ আমরা পয়সা দিয়ে ‘সেলফ-মোটিভেশন’ এর সেশন অ্যাটেন্ড করি। ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির’ এই কবিতাটি জোর গলায় পড়ে দেখেছি কোনোদিন? বা ‘অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো’ গানটি একবার শুনেছি। তাহল আলাদা করে আর মোটিভেশনাল টকের দরকার পড়ত না।
বর্তমান এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর কাজকে আরও আঁকড়ে ধরা উচিত আমাদের। জীবনের যে কোনো দ্বিধায় তাঁর কালজয়ী সৃষ্টির শরণাপন্ন হওয়া যায়। তাঁর গানকে চটুল বানিয়ে বিক্রি করে হয়ত দুই পয়সা আয় করতে পারে কিছু মানুষ কিন্তু গোটা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মনে তিনি ‘দুই বিঘা’ করে জমি ইতিমধ্যেই কিনে রেখে গিয়েছেন। তাঁর কোনো বিকল্প নেই।