দীর্ঘ ২৩ বছর আগে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিলেন! অন্যায়ের প্রতিবাদে শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরব হলেন নির্যাতিতা
কেটে গেছে সুদীর্ঘ ২৩টা বছর। নিজের ওপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ তিনি করেননি। চুপচাপ থেকেছেন। হয়ত কাজ করেছে ভয়, লজ্জা। নিজের মুখ খোলেননি আজ থেকে ২৩ বছর আগে নিজের শিক্ষকের হাতে শ্লীলতাহানির (Molestation) শিকার হওয়া ওই যুবতী, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৪ ৷ দার্জিলিংয়ের একটি স্কুলে পড়ার সময়ই ঘটে এই ঘটনা।
আজ তাঁর বয়স ৩৭। সুপ্রতিষ্ঠিত। হংকংয়ে আইনজীবী। কিন্তু ওই যুবতী জানতে পারেন, তাঁর মতোই আরও অনেক ছাত্রীর সঙ্গেই একই ধরনের আচরণ করেছেন ওই শিক্ষক ৷ আর তা জানার পরই মুখ খুললেন তিনি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই জিতেশ ওঝা (Jitesh Ojha) নামে এক স্কুল শিক্ষককে (School Teacher) গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷
ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওই যুবতী আইনজীবীর অভিযোগ এনেছেন, বিশেষত ওই শিক্ষকের কাছে যাঁরা প্রাইভেট টিউশন নিতে যেত, সেই সমস্ত ছাত্রীদেরই নিশানা করতেন তিনি৷ আদতে দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা ওই যুবতীকেও প্রায় কুড়ি বছর আগে টিউশন পড়াতেন তিনি৷ কিন্তু এতদিন ভয়ে কেউই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি৷ যুবতীর অভিযোগ, মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাঁকেও ভয় দেখিয়েছিলেন ওই শিক্ষক৷ অভিযোগকারিণী আরও জানিয়েছেন, প্রায় কুড়ি বছর আগে দার্জিলিং-এর মতো ছোট শহরে বসে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস তিনি সঞ্চয় করতে পারেননি৷ পাশাপাশি, ওই বয়সে যথাযথ সচেতনতার অভাবে শিক্ষকের উদ্দেশ্য নিয়েও নিশ্চিত ছিলেন না তিনি৷ কোনটা ভাল স্পর্শ, কোনটা খারাপ, সেই ধারণাও ছিল না তাঁর৷ পরবর্তী সময়ে বিষয়গুলি স্পষ্ট হলেও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি৷ কিন্তু ওই শিক্ষক অনেকের সঙ্গেই এই আচরণ করেছে জানার পরই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন ওই যুবতী৷
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দার্জিলিং সদর পুলিশ স্টেশনে ই-মেল-এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করেন ওই যুবতী৷ এর পর ওই যুবতীর থেকে অভিযোগের স্বপক্ষে আরও তথ্য এবং প্রমাণ চায় পুলিশ৷ সেই সমস্ত তথ্য হাতে পাওয়ার পরই তদন্ত শুরু করে পুলিশ৷ প্রায় এক বছর ধরে তদন্ত উঠে আসে, ওই শিক্ষকের হাতে বিভিন্ন সময়ে আরও বহু ছাত্রী যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, সাক্ষী জোগাড়ের পাশাপাশি করোনা মহামারীর সময়েও ওই শিক্ষকের হাতে নিগৃহীত আরও ছাত্রীর খোঁজ পেয়েছেন তাঁরা৷ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পরই গত ৫ অক্টোবর শিলিগুড়ির ভাড়া বাড়ি থেকে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়৷
৪৬ বছর বয়সি জিতেশ ওঝা নামে ওই শিক্ষক গত কুড়ি বছরে একাধিক নামী স্কুলে পড়িয়েছেন৷ তাঁর স্ত্রী এবং একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে৷ বর্তমানে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখা হয়েছে ওই শিক্ষককে।