উচ্চশিক্ষিত হয়ে চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার পরও মেলেনি চাকরি, সংসারের হাল টানতে লটারির টিকিট বিক্রি করছেন M.A. পাশ তন্ময়

এখন রাজ্যে চাকরি নিয়ে নানান দুর্নীতির কথা কানে আসছে। কেউ কেউ পাশ না করেই পেয়ে গিয়েছে চাকরি তো কেউ আবার পরীক্ষাই দেয় নি অথচ চাকরি করে যাচ্ছে। কেউ কেউ নিজের প্রভাব খাটিয়ে ঠিক চাকরি আদায় করে নিয়েছে। আর অন্যদিকে যারা আসলে যোগ্য চাকরিপ্রার্থী তারাই চাকরির জন্য দিনের পর দিন অনশন, আন্দোলন করে চলেছেন।
তন্ময় চুনারি। মুর্শিদাবাদের নওদা সাঁকোয়া এলাকার বাসিন্দা। উচ্চশিক্ষিত এই যুবক চাকরির অনেক পরীক্ষাই দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকরি না পেয়ে এবার নওদার আমতলা বাজার এলাকায় লটারির টিকিট বিক্রির পথই বেছে নিয়েছেন। লটারির টিকিট রাখা টেবিলে লেখা, ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা’।
তন্ময় জানান যে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। সেই সময় বাড়িতে তাঁর মা, দাদা ও বৌদি। দু’বেলা খাবারের জন্য সেই সময় একটি সাইকেলের দোকানে কাজ শুরু করেন তন্ময়। স্কুলছুট হয়ে পড়েন প্রায়। সেই সময় তাঁর দাদা আমতলা বাজার এলাকায় লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেন।
এরপর ফের স্কুলে ভর্তি হন তন্ময়। ২০১১ সালে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। তার পর সংসারের খরচ জোগাতে কখনও রাজমিস্ত্রি, কখনও রংমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ, কখনও অন্যের জমিতে দিনমজুরিও করতে হয়েছে তাঁকে। এ ভাবে ২০১৮ সালে আমতলা যতীন্দ্র রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয় থেকে বিএ এবং গত বছর দূরশিক্ষায় বাংলা নিয়ে এমএ পাশ করেন তিনি।
তন্ময় জানান যে রাজ্য পুলিশের এসআই থেকে শুরু করে কনস্টেবল, কেন্দ্রে সিআইএসএফ, রেল, ব্যাঙ্কের নানান পরীক্ষায় বসেছেন তিনি। কোনও কোনও পরীক্ষায় প্রথম ধাপের লিখিত ও শারীরিক পরীক্ষাতেও পাশ করেছেন। কিন্তু এরপরও মেলেনি চাকরি। কিছুমাস আগেই মৃত্যু হয় তন্ময়ের দাদার। সংসারের ভার এসে পড়ে তাঁর কাঁধেই।
মা অসুস্থ, ভাইপোর পড়াশোনা, সংসারের চারটে মানুষের পেটের ভাত জোগাতে দাদার মতোই লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেন তন্ময়। আমতলা বাজার এলাকাতেই এই টেবিল নিয়ে লটারির টিকিট বিক্রি করেন তিনি। টেবিলে লেখা, ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা’। কয়েকদিন ধরে বেশ ভিড় বেড়েছে তন্ময়ের দোকানে।
কিন্তু লটারির টিকিট বিক্রিই কেন? তন্ময় জানান, “যা অবস্থা, তাতে মিছিমিছি চাকরি পিছনে ছুটে বয়স নষ্ট হচ্ছে। টুকিটাকি টিউশন করে পকেট খরচই ওঠে না। তা ছাড়া, দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে অন্য ব্যবসা করার মতো পুঁজি বা সামর্থ্য কিছুই নেই। আর লটারি বিক্রি সরকার স্বীকৃত, তা ছাড়া পুঁজিও লাগে না”।
সারাদিন লটারির টিকিট বিক্রি করে কমিশন হিসেবে গড়ে আড়াইশো-তিনশো টাকা পান তন্ময়। সেই দিয়ে কোনওক্রমে চলছে সংসার। তবে পুলিশ বা সামরিক বাহিনীতে চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন কিন্তু ছাড়েন নি তন্ময়। প্রতিদিন সকালে দৌড়ন তিনি। প্রস্তুত করছেন নিজেকে। দোকানেই কখনও কখনও আবার বইয়ের পাতাও উলটে নেন এমএ পাশ তন্ময়।