সন্দেহের বশে লুকিয়ে স্বামীর ফোন ঘাঁটা বা অকারণে সন্দেহ করা আসলে মানসিক অত্যাচার, জানাল হাইকোর্ট

অকারণে সন্দেহ করে যদি লুকিয়ে স্বামীর ফোন ঘাঁটেন কোন স্ত্রী, তাহলে তা মানসিক অত্যাচারের সামিল, এমনটাই জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। নিম্ন আদালতের রায়কেই শেষ পর্যন্ত সমর্থন করল উচ্চ আদালত। এই ঘটনাকে ‘মানসিক নির্যাতনের’ সংজ্ঞা দিয়ে এক নতুন মাত্রা যোগ করল আদালত।
আসলে, প্রায় দশ মাস বিবাহিত জীবন কাটানোর পর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আলিপুর আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন দক্ষিণ কলকাতার এক ব্যক্তি।
তিনি আদালতে অভিযোগ করেন যে তাঁর স্ত্রী সবসময় তাঁর মা-বাবাকে অসম্মান করেন, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বাড়ির কোনও কাজে তাঁর স্ত্রী কোনও সাহায্য করেন না। সকাল ৯টায় অফিসে বেরিয়ে রায় ৮টার আগে বাড়ি ঢোকেন না। এমনকি, ওই ব্যক্তি এও অভিযোগ করেন যে তাঁর স্ত্রী তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করেন যাতে তিনি তাঁর মা-বাবার থেকে আলাদা থাকেন। আর সবথেকে বড় অভিযোগ, তাঁর স্ত্রী তাঁকে প্রতিনিয়ত সন্দেহ করেন আর সন্দেহের বশে তাঁর ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করেন।
ব্যক্তি জানান যে তিনি তাঁর স্ত্রীয়ের হাতে মানসিকভাবে নির্যাতিত। তিনি এও জানান তাঁর স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে এখন অন্যত্র থাকছেন। এই কারণে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করে ওই ব্যক্তি আলিপুর জেলা আদালতে আর্জি জানান যাতে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ মঞ্জুর হয়ে যায়। তবে এই মামলায় ওই ব্যক্তির স্ত্রী লিখিতভাবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান যে তাঁর স্বামীই তাঁকে পরিত্যাগ করেছেন।
এই বিষয়ে নিজের সপক্ষে ওই ব্যক্তি কোনও যুক্তি না দেখাতে পারলেও, তাঁর স্ত্রীয়ের তাঁকে লেখা একটি চিঠি আদালতে পেশ পেশ করেন ওই ব্যক্তি যাতে তাঁর স্ত্রী সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করেছেন। এরপরই জেলা আদালতের বিচার রায় দিয়ে জানান যে শ্বশুর-শাশুড়িকে অসম্মান করা, চাকরির কাজে দেরি করে বাড়ি ফেরা না বাড়ির কাজ না করা কোনও মানসিক নির্যাতন নয়। তবে আদালত এও জানায় যে অকারণে স্বামীকে সন্দেহ করা বা সন্দেহের বশে ফোন ঘেঁটে দেখা অবশ্যই মানসিক নির্যাতনের আওতায় পড়ে। এরপর ওই দম্পতির আইনি বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দেন বিচারপতি।
এরপর নিম্ন আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেন ওই ব্যক্তির স্ত্রী। বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটি ওঠে। আর এই মামলায় রায় জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ জানায় যে নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক। অকারণে স্বামীকে সন্দেহ করা বা সন্দেহের বশে ফোন ঘেঁটে দেখা মানসিক নির্যাতন বলেই গণ্য হবে। ডিভিশন বেঞ্চের তরফে এই মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয়।