অভাবনীয়! স্কুলের খরচ মেটাতে চপ বিক্রি করছেন খোদ প্রধান শিক্ষকই, ব্যবসার টাকাতেই বেতন তুলে দিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের হাতে
স্কুলের খরচ মেটাচ্ছে চপশিল্প, কখনও কী এমন কথা শুনেছেন? তাও আবার সেই চপের ব্যবসা চালাচ্ছেন খোদ স্কুলের প্রধান শিক্ষকই। এমনই ঘটনা ঘটেছে রা রাজ্যেই। শুনতে বেশ অবাক লাগলেও এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিন্তু চপ বিক্রি করেই বেতন মেটাচ্ছেন স্কুলের বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের।
সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রামের এক বেসরকারি নার্সারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তিমির মল্লিক এমন অভাবনীয় একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। করোনা কালে তাঁর স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা বেশ কমে যায়। পরিস্থিতি এমনই খারাপ হয় যে অনেক অভিভাবকই স্কুলে ফি মেটাতে পারেন নি। এর জেরে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন তিমিরবাবু।
এমন সময় অনলাইন ক্লাস শুরু করেও লাভ হয়নি কারণ অধিকাংশ অভিভাবকের কাছে স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইন ক্লাস করতে পারে নি অনেক পড়ুয়াই। আবার এদিকে অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফোনের ইন্টারনেটের খরচও জোগাতে হচ্ছিল।
এই পরিস্থিতিতে অন্য উপায় না দেখে চপের দোকান শুরু করেন তিমিরবাবু। বাণিজ্যে স্নাতক এই প্রধান শিক্ষক গত দেড় বছর ধরে চালাচ্ছেন এই ব্যবসা। আর এই ব্যবসার লাভের টাকা থেকেই বেতন পাচ্ছেন স্কুলের বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা। তাঁকে এই কাজে সাহায্যও করেন স্কুলের শিক্ষাকর্মীরা।
তিমিরবাবুর এই দোকানের রোজকার খদ্দের হলেন আশেপাশের গ্রামের নানান স্থানীয়রা। তিমিরবাবুর এই ‘স্পার্ক ২০২০’ নামের এই দোকানে সকালে পাওয়া যায় ইডলি, হিংয়ের কচুরি, চা, ঘুগনি, আলুর চপ আর বিকেলে থাকে নানান মুখরোচক খাবার। থাকে ভেজিটেবল চপ থেকে শুরু করে ডিমের চপ, এগ চাউমিন, চিকেন চাউমিন, সিঙ্গারা, চিকেন কাটলেট ও আরও সুস্বাদু সব খাবার। আর এরই সঙ্গে মিষ্টির তালিকায় তো রয়েছেই রসগোল্লা, পান্তুয়া, মিষ্টি দই, গজা, আরও কত কী!
এই প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক তিমির মল্লিক জানান, “করোনার সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রমাণ হিসেবেই আমি দোকানের এই নাম দিয়েছি। তবে শুধু চপশিল্প কেন, নিষ্ঠাভরে যে কোনও কাজ করলেই সাফল্য আসে। যা মূলধন ছিল তাতে বড়জোর দু’মাস শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন মেটানো যেত। তার পরে কী হবে ভেবেই চপ-মিষ্টির দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিই”।
১৯৯৭ সালে এই বেসরকারি স্কুল চালু করে তিমিরবাবু। এই স্কুলে ইংরেজি ও বাংলা দুটি মাধ্যমই রয়েছে। করোনার আগে এই স্কুলে প্রি-নার্সারি থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাতশো। কিন্তু করোনা পরবর্তীকালে সেই চিত্র অনেক বদলেছে।
এই কারণে ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া পঞ্চায়তের পুরুষোত্তমপুরে তিমিরবাবুর যে তিন কাঠা জমি ছিল, তাতেই ২০২০ সালে সেপ্টেম্বর মাসে এই দোকান খোলেন তিনি। তাঁর এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তিমিরবাবুর স্বপ্ন তাঁর এই দোকানের লাগোয়া যে জমি রয়েছে তাতে আদিবাসী শিশুদের জন্য একটি অবৈতনিক স্কুল খুলবেন।