কথায় বলে লজ্জা ঘৃনা ভয় তিন থাকতে নয়। এবার এই তিনের মধ্যে ভয় নিয়ে গবেষণা করে স্বীকৃতি পেলেন সবার অতি পরিচিত ‘সোনা’। আসলে ‘সোনা’ নামেই বিজ্ঞানী মহল তাঁকে একডাকে চেনে। ভারতের প্রথম স্নায়ুবিজ্ঞানী হিসেবে বিশ্বমঞ্চে উঠে এল বাঙালি বিজ্ঞানীর নাম। জীববিজ্ঞান বিভাগে অবদানের জন্য স্বীকৃত হলেন বাংলার বিজ্ঞানী অধ্যাপক সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়।
ইউরোপিয়ান মলিকিউলার বায়োলজি অর্গানাইজেশন বা ‘এমবো’ প্রতিষ্ঠানের অ্যাসোসিয়েট সদস্যপদ দেওয়া হল তাঁকে। ইউরোপের বাইরে কোনো বিজ্ঞানীকে এমন সম্মান জানালেন তাঁরা। গত ৫৭ বছরে এমবো-র ১৮০০-র বেশি সদস্যের মধ্যে রয়েছেন ৮৮ জন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী।
আমাদের জীবনে আমরা অনেকরকম ভয়ের মুখোমুখি হয়ে থাকি। যেমন কেউ ভূত দেখে ভয় পায়, কেউ পরিবারকে, কেউ বা আবার অন্য কোনো জিনিসে। এই ভয় বা ফোবিয়ার পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। সেসব নিয়েই মূলত গবেষণা করেছেন অধ্যাপক সুমন্ত্রবাবু। প্রায় ২২ বছর ধরে তিনি বিজ্ঞান সাধনা করে গেছেন।
এই ভয় বা ফোবিয়া, তা থেকে হওয়া মানসিক সমস্যা ও জটিলতা নিয়ে নানা দিক দিয়ে পড়াশোনা করে গেছেন তিনি। আমাদের প্রতিদিনের বেঁচে থাকায় আমরা অনেক ধরনের চাপের মধ্যে দিয়ে যাই; কেউ কম আবার কেউ অনেকটা বেশি। এই চাপ, ভয়, স্ট্রেস আমাদের শরীরের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। এমনকি তা থেকে নানান রোগেরও উপস্বর্গ দেখা দেয়। এই চাপ খুব বেশি করে প্রভাবিত করে আমাদের মস্তিস্কের অনুভূতি নিয়ন্ত্রক অংশের ওপর। এমনকি তার চরিত্রও বদলে যেতে পারে। এই যাবতীয় জিনিসই নিজের গবেষণার মাধ্যমে তুলে এনেছেন সুমন্ত্রবাবু। এই গবেষণা বেশ কিছু রোগের পথও বাতলে দিয়েছে। পাশাপাশি ওষুধ তৈরির কাজও এগিয়েছে। তাঁর এই কাজ শুধু দেশেই নয় বিদেশেও সমানভাবে সমাদৃত হয়েছে।
বর্তমানে সেন্টার ফর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিপেয়ারের অধিকর্তা তিনি। এছাড়াও ব্যাঙ্গালোরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিকাল সায়েন্সেসের( এনসিবিএস) সিনিয়র অধ্যাপকের পদে কর্মরত রয়েছেন। এরই মধ্যে চলে এল এমন আন্তর্জাতিক সম্মান।
এর আগে মাত্র চারজন ভারতীয় বিজ্ঞানী এই সম্মান পেয়েছেন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কে বিজয়রাঘবন। তবে ভারতের প্রথম স্নায়ুবিজ্ঞানী হিসেবে তিনিই প্রথম যাকে এমবো’র সাম্মানিক সদস্যপদ দেওয়া হল। ইউরোপের বাইরের মোট ৭টি দেশের ১১ জন সদস্যকে অ্যাসোসিয়েট সদস্য করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম নামটিই হল সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়। স্বভাবতই তাঁর এমন সম্মানে পুলকিত দেশের বিজ্ঞানীমহল থেকে সাধারণ মানুষ। নিজের এই সাফল্যের জন্য সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ছাত্রছাত্রীদেরও কৃতিত্ব দিয়েছেন।