গ্রাহককে অন্ধকারে রেখে খোলা হল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লকার, উধাও ৬০ থেকে ৭০ ভরি সোনার গয়না
এ এক অদ্ভুত প্রতারনার ঘটনা। ব্যাঙ্কের লকারের চাবি গ্রাহকের কাছে থাকে। নিজে গিয়ে লকার খোলা না পর্যন্ত তা খোলার অধিকার কারর নেই। কিন্তু সম্প্রতি বর্ধমান (Burdwan) শহরের বাদামতলা এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ঘটে যাওয়া ঘটনা সেই বিষয়ের উপর প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দিয়ে গেল। গ্রাহকের অজান্তে খোলা হল ব্যাঙ্কের লকার। ৬০ থেকে ৭০ ভরি সোনার গয়না খোয়ালেন গ্রাহক। আর রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাঙ্কে এমন ঘটনা ঘটায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে বর্ধমান শহরে। ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
যে পরিবারের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে সেই পরিবারের কর্তা পবিত্র সামন্ত (Pabitra Samanta) পুলিশকে জানিয়েছেন, গত শনিবার বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ তাঁদের বাড়িতে দু’জন এসেছিলেন। সেই সময় বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না পবিত্রবাবু। ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় তাঁর পুত্রবধূর। পুলিশকে ওই মহিলা জানিয়েছেন, দুই ব্যক্তি নিজেদের নির্দিষ্ট ব্যঙ্কের কর্মী বলে পরিচয় দেন এবং তারপর একটি চিঠি দেন তাঁকে। এমনকি মহিলা যে চিঠি পেয়েছেন সেই কথা সইসাবুদ করে মহিলাকে দিয়ে লিখিয়েও নেন ওই দুই ব্যক্তি। তবে সইয়ের পর তারিখ দিতে বারণ করেন তাঁরা।
পবিত্রবাবু বাড়ি ফিরলে তাঁকে সব জানান পুত্রবধূ। ব্যাঙ্কের থেকে আসা চিঠি পড়ে পবিত্রবাবু জানতে পারেন লকারের ব্যাপারে আলোচনার জন্য তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই মুহূর্তেই ব্যাঙ্কে ছোটেন পবিত্র বাবু। যাওয়ার পর ম্যানেজার তাঁকে জানান যে লকার খোলা রয়েছে এবং সেখান থেকে উধাও হয়ে গেছে সমস্ত সোনার গয়না। কীভাবে এমন ঘটল তা জানতে চাওয়ায় কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। পারিবারিক সোনা খুইয়ে কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে পবিত্রবাবু।
সামন্ত পরিবারের অভিযোগ, এ কাজে ব্যাঙ্কেরই কেউ যুক্ত রয়েছেন। নইলে এমন কাজ হওয়া সম্ভব নয়। ঘটানার যথাযথ তদন্তের দাবি করে পবিত্র বাবু জানিয়েছেন, “লকারের চাবি আমাদের কাছেই ছিল। গত ২ বছরের মধ্যে এক বারও লকার খোলা হয়নি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও কিছু জানায়নি আমাদের। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ব্যাঙ্কের লকারে রাখা সোনা ব্যাঙ্কের কর্মীরা ছাড়া আর কেউ সরাতে পারে না।” ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সামন্ত পরিবারের পাশাপাশি ব্যাঙ্ক কর্মীদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।
ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও। অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবারও। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। পুলিশ সূত্রে খবর, বর্ধমান শহরের বনমসজিদ পাড়ার বাসিন্দা পবিত্র সামন্ত দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যাঙ্কের গ্রাহক। প্রায় ৪০ বছর ধরে তাদের পরিবারের সমস্ত মূল্যবান সোনার গয়না রাখা ছিল এই ব্যাঙ্কের লকারে। সামন্ত পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে বছর দুয়েক শেষবার লকার খুলেছিল তারা। তারপর পরিবারের আর কোনও সদস্যই ব্যাঙ্কে গিয়ে লকার খোলেননি।