নজিরবিহীন! ছেলের সঙ্গেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন মা, ছেলের থেকে নম্বর বেশি পাওয়ায় মন খারাপ লতিকার

একইসঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন মা ও ছেলে। দু’জনেই ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন। তবে ছেলে সৌরভ মণ্ডলের থেকে নম্বর বেশি পাওয়ায় আক্ষেপ রয়ে গেল মা লতিকা মণ্ডলের। তাঁর আক্ষেপ, ছেলে যদি তাঁর থেকে বেশি পেত, তাহলে ভালো হত। সত্যিই, মায়েরা বোধ হয় এমনই হয়।
নদিয়ার শান্তিপুর থানার নৃসিংহপুর নতুন সর্দারপাড়া এলাকার বাসিন্দা লতিকা মণ্ডল। দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে তাঁর। মেয়েরা কলেজে পড়ছে। লতিকার বয়স ৪০-এর কাছাকাছি। ছোটো থেকেই পড়াশোনা করার ইচ্ছা তাঁর। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে বেশি পড়াশোনা হয়ে ওঠেনি। আর্থিক অনটন আর পারিবারিক পরিস্থিতির কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেই বাধ্য হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেন লতিকা।
১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় লতিকার। স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। সংসারের অভাব মেটাতে শাড়ি বোনার কাজ শুরু করে লতিকা। ছেলের জোরাজুরিতেই পড়াশোনা ফের শুরু করেন। রবীন্দ্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হন তিনি।
মাধ্যমিক দেওয়ার পর নৃসিংহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন লতিকা। ছেলে সৌরভ ছিল কালনা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। একই শ্রেণির পড়ুয়া মা ও ছেলে বাড়িতে একইসঙ্গে বসে পড়াশোনা করত। ছেলের সঙ্গে লেখাপড়া, এই নিয়ে কম কটুক্তি শুনতে হয়নি লতিকাকে। তার মধ্যেই সংসার সামলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি।
গতকাল, বুধবার উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আর তাতেই উত্তীর্ণ হয়েছেন শান্তিপুরের মা ছেলের জুটি। মা লতিকা মন্ডলের নম্বর ৩২৪। ছেলে সৌরভ মন্ডল পেয়েছেন ২৮৪।
তবে দুজনের নেওয়া বিষয়গুলির মধ্যে তিনটি বিষয় একই বেছে নিয়েছিলেন সৌরভ ও লতিকা। মা ও ছেলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস এবং এডুকেশন একই সঙ্গে পড়তেন। চতুর্থ বিষয় হিসেবে মা লতিকার বিষয় ছিল সংস্কৃত আর সৌরভ বেছে নিয়েছিলেন দর্শন।
মায়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে গেলেও দুঃখ নেই ছেলে সৌরভের। মায়ের সাফল্যে তিনি গর্বিত, এমনটাই জানান সৌরভ। বলেন, “মা এত ভালো ফলাফল করেছে, এতে আমার মোটেই খারাপ লাগছে না। আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে আরও উচ্চশিক্ষিত হতে চাই”। লতিকাও স্বপ্ন দেখছেন উচ্চশিক্ষার। কলেজে পড়ে একটা চাকরি পেতে চান তিনি।