“ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলব কেন? নিজেকে ছোটো লাগে”, ঘাটালে বললেন দেব, ভাইরাল হল ভিডিও
তিনি যেন ঠিক রাজনীতির লোক না। অভিনয় তাঁর নেশা এবং তাঁর পেশাও বটে। তবুও হার্ডকোর রাজনীতিতে এসেও নিজের মানবদরদী ইমেজটা বদলে ফেলতে পারেননি। নিজেকে রাজনৈতিক চাপানউতোর-তরজার থেকে দূরে রেখেছেন। এবারও সেই ধারা বজায় রাখলেন ঘাটালের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ দেব।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির পর্যালোচনায় শনিবার মেদিনীপুরে আসেন দেব। জেলা পরিষদের সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির ভিডিয়ো কনফারেন্সে যোগ দেন। কনফারেন্সে ছিলেন জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, মানস ভুঁইয়া-সহ অন্যান্য নেতারা। বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে পরিযায়ী শ্রমিক, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো-সহ একাধিক বিষয়ে কথা বলেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ এবং অন্য রাজ্যে আটকে পড়া ঘাটালে বসবাসকারী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ব্যাপারে জেলা শাসক এবং এস. পি – এর সাথে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত এই পরিস্থিতির নিরাময় হোক, সকলে বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন। pic.twitter.com/wViiYw7BE4
বিজ্ঞাপন
— Dev (@idevadhikari) May 16, 2020
বিজ্ঞাপনস্বাভাবিকভাবেই করোনা পরিস্থিতির সময় নিজের লোকসভায় না আসায় বিরোধীদের কটাক্ষের প্রসঙ্গও ওঠে। এখানেই তাঁর জবাব মানুষের মন কেড়ে নেয়, যে ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। দেব জানান, তিনি এলাকায় না এলেও জেলা প্রশাসন এবং তাঁর প্রতিনিধিরা এলাকায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘আমি ছবি তুলে পোস্ট করার মতো লোক নই যে আমি গিয়েছি, আমি ছবি তুলেছি। আমি সেই রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আপনি জেলাশাসককে জিজ্ঞাসা করুন, আমি যতটা পেরেছি ত্রাণ দিয়েছি। আমার লোকেরা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। আমি মাঝে আসার চেষ্টাও করেছিলাম। সেই তথ্যও দিয়ে দিতে পারি। তখন ডিএম (জেলাশাসক) ও এসপি (পুলিশ সুপার) বলেছেন, আপনাকে নিয়ে গেলে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং (সামাজিক দূরত্ব) মেনটেন করা যাবে না। আপনাকে যদি কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাই ব্লকে ঢোকেন, প্রচুর ভিড় হয়ে যাবে। সেটা নিয়ে অন্য কিছু হবে। আপনি ফোনে কথা বলুন। আমরা দেখছি।’
বিজ্ঞাপনদেব জানান, ভিডিয়ো কনফারেন্স হওয়ায় তিনি মেদিনীপুরে এসেছেন। মানুষের মধ্যে গিয়ে নিয়মবিধি ভাঙার রাস্তায় হাঁটেননি। তাঁর কথায়, ‘আজ আমরা যেহেতু ভিডিয়ো কনফারেন্স করছিলাম, আমি অজিত দা’কে বললাম প্লিজ আমায় ডেকো। আমি দেখতে চাই. জানতে চাই কী হচ্ছে। আমি আবারও বলছি এটা ভিডিয়ো কনফারেন্সে হয়েছে। আমি মাঠে ওরকমভাবে যাইনি যে কাউকে খাবার দিলাম। সেই ছবি তোলা হল এবং পোস্ট হল। এরকম রাজনীতি করতে আসিনি আমি। নিজেকে ছোটো লাগে এক কেজি চাল দেওয়ার জন্য যখন দেখি তাঁর বাবার নাম, মায়ের নাম, বোনের নাম কী জিজ্ঞাসা করা হয়। খারাপ লাগে যে একটা জিনিস দেওয়ার আগে তুমি কতটা গুরুত্বপূর্ণ (তা দেখানোর চেষ্টা করছ)। তুমি তো একটা মানুষকে ছোটোও করছ। উনি তো নিজের ইচ্ছায় নিচ্ছেন না। এরকম একটা বিপদে, এরকম একটা সময়ে যখন কাজকর্ম নেই, তিনি বাধ্য হয়ে নিচ্ছেন, তুমি তাঁকেও ছোটো করছ। তুমি নিজেকেও তো বড় করছ না।’
পাশাপাশি দেব জানান, ভিনরাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যসচিব রাজীব সিনহার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যে ট্রেনগুলি রাজ্যে এসেছে, তাতে কতজন ঘাটালের বাসিন্দা ছিলেন, সেই তালিকাও তুলে দিয়েছেন তিনি।
তাঁর এই জবাবই যেন বুঝিয়ে দিল তিনি জনগণের মানুষ।মাটি থেকে উঠে আসা মানুষরা বোধহয় এরকমই হন।
বিজ্ঞাপন