পার্থর জমিতেই কী ঝাঁ-চকচকে বিরাট ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গড়েছেন তাঁর জামাই? কটাক্ষ বিরোধীদের, ‘সব মিথ্যে’, চাপের মুখে পড়ে বললেন মন্ত্রী

এক বছর মাত্র হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার (Pingla) এক প্রত্যন্ত গ্রামে তৈরি হয়েছে ঝাঁ চকচকে ‘বিসিএম ইন্টারন্যাশানাল স্কুল’ (BCM International School)। এখন এই স্কুল নিয়েই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। এই স্কুলটি গড়ে উঠেছে ‘বাবলি চট্টোপাধ্যায় মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’-এর সৌজন্যে। এই বাবলি চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) প্রয়াত স্ত্রী। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীর নামেই প্রায় সাড়ে তিন একর জমির উপর এই ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তৈরি করেছেন তাঁর জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্য (Kalyanmoy Bhattacharya)।
জানা যাচ্ছে, নিজের মামার থেকে জমি লিজে নিয়ে এই স্কুল করেছেন কল্যাণময়। গত বছর এপ্রিলে চালু হয় এই স্কুল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেও দু’বার এসেছেন এই স্কুলে। কিন্তু এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর নাম জড়ানোর পরই এই স্কুল নিয়েও নানান প্রশ্ন উঠেছে।
এই স্কুল নিয়ে নানান মন্তব্য করেছেন বিরোধীরা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই স্কুল তৈরি নিয়ে নানান তথ্য দিয়ে টুইট করেন। অন্যদিকে, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন রাখেন, “প্রত্যন্ত গ্রামে এত টাকা দিয়ে স্কুল হল, এর উৎস কী? এতে আপনার বিনিয়োগ আছে নাকি”?
Mr. Kalyanmay Bhattacharya; Chairman, Founder & Trustee of BCM School is the son in law of the former Education Minister.
His uncle Krishna Prasad Adhikary manages the daily affairs of the school.All in the family !!!@jdhankhar1@PTI_News@ANI pic.twitter.com/1A9KlWeEf6
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) May 22, 2022
The BCM school was inaugurated by former Education Minister of WB; Sri Partha Chatterjee, who seems to have taken a keen interest in establishment of the institute.
Coincidentally, BCM is also the abbreviation for Babli Chatterjee Memorial; matching his late wife's name.
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) May 22, 2022
এমন প্রশ্নের উত্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাফ বলে দেন, “সর্বৈব মিথ্যে”। পিংলার বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অজিত মাইতিও বলেন, “ওখানে পার্থদা স্কুল করেছেন বলে জানা নেই। কারও জামাই যদি শাশুড়ির নামে স্কুল করেন, সেটা অন্যায় নয়। আর জামাইয়ের স্কুল মানেই সেখানে শ্বশুরের টাকা থাকবে এমনটাও নয়”।
যার জমিতে এই স্কুল গড়ে উঠেছে সে কৃষ্ণচন্দ্র অধিকারী হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্যের মামা। চার বছর আগেও এই কৃষ্ণচন্দ্রের দিন চলত যজমানি করেই। তাঁর জমিতেই গড়ে ওঠে এই স্কুল।
কৃষ্ণচন্দ্রের দাবী, “বোটানিক্স অ্যাগ্রোটেক গড়ার জন্য ২০১৮ সাল থেকে ধাপে-ধাপে জমি কিনেছি। পরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামাই, আমার ভাগ্নে কল্যাণময় ভট্টাচার্য ৭ বিঘা জমি লিজ়ে নিয়ে এই স্কুল গড়েছে। শাশুড়ির নামে ও কেন স্কুলের নাম দিয়েছে তা অবশ্য আমার জানা নেই”। তিনি আরও বলেন, “ভাগ্নে সস্ত্রীক বিদেশে থাকে। আমিই স্কুলের কাজকর্ম দেখভাল করি। সিবিআই তদন্তে এলে জবাব দিতে তৈরি আছি”।
গ্রামের সাধারণ এক পুরোহিত কৃষ্ণচন্দ্র, তিনি উদ্যোগপতি হয়ে জমি লিজে দিলেন, এই কথাটা সহজে হজম হয়নি গ্রামবাসীদের। স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবী, “কৃষ্ণচন্দ্র অধিকারীরা আগে যজমানি করতেন। ভাগ্নের কল্যাণে এখন ওঁরা খুব প্রভাবশালী। বিশাল গাড়িতে ঘুরে বেড়ান। সম্পত্তি করেছেন। স্কুলের তো সবটাই কৃষ্ণদা”। অন্যদিকে, কৃষ্ণচন্দ্রের দাবী, “বিশ বচ্ছর ধরে পৈতৃক জমি বেচে তিল তিল করে গড়া ধানের ব্যবসায় উন্নতি করেছি। আর গাড়ি তো স্কুলের”।
তবে আপাতত এই স্কুল নিয়ে বিরোধীদের এমন চর্চায় শঙ্কিত স্কুল পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। এই স্কুলে সিবিআই হানা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এর জেরে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আতঙ্কে রয়েছেন অভিভাবকরা।
সূত্রের খবর, নোটবন্দির পর থেকেই শুরু হয় জমি কেনা। এক জমিদাতা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কৃষ্ণচন্দ্র রাউত বলেন, “আমার ৭৩ ডেসিমেল জমি বোটানিক্স অ্যাগ্রোটেকের নামে কৃষ্ণচন্দ্র অধিকারীকে বিক্রি করেছিলাম প্রায় ১১ লক্ষ টাকায়। নগদেই টাকা দেওয়া হয়েছিল”। এদিকে কৃষ্ণচন্দ্র অধিকারীর দাবী, “জমির যাবতীয় টাকা চেকেই দেওয়া হয়েছিল”।