ছেলের পড়াশোনার জন্য শেষ সম্বল কানের দুল বিক্রি করেন মা, আর্থিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় সাফল্য পেয়ে বিডিও হলেন পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলে
দারিদ্রের সঙ্গে লড়াইটা ছোটো থেকেই। অভাব ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। তবে শেষ পর্যন্ত সব বাধা কাটিয়ে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় সাফল্য পেয়ে বিডিও হলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের ২ নম্বর ব্লকের হরদমনগর গ্রামের যুবক কেশব দাস। একথা জানাজানি হতেই খুশির ঢল নেমেছে কেশবের বাড়িতে।
তবে কেশবের এই লড়াইটা মোটেই সহজ ছিল না। অভাব তাঁর পরিবারের দৈনন্দিন সঙ্গী। বাবা শ্রমিকের কাজ নিয়ে ভিনরাজ্যে ছিলেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময়ে কাজ হারিয়ে বাড়িতে থাকেন তিনি। বর্তমানে দিনমজুরি এবং অন্যের জমিতে চাষবাস করে সংসার চালান। ওই পরিবারের ছেলে কেশব পড়াশোনার খরচ চালাতে গৃহশিক্ষকতাও করেছেন।
জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে হরদমনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন কেশব। ২০১৩ সালে দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৬ শতাংশ পেয়ে পাশ করেন তিনি। এরপর ২০১৬ সালে মালদহ কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে স্নাতক ও ২০১৮ সালে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন তিনি।
কেশবের কথায়, ২০২০ সালে দ্বিতীয়বার ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। চলতি মাসের ২ তারিখ প্রকাশিত হয় ফলাফল। দেখা যায় ডব্লিউবিসিএস এক্সিকিউটিভ ‘এ’ বিভাগে পশ্চিমবঙ্গে ২৭ তম স্থান পেয়েছেন তিনি।
কেশব জানান, “মালদহে হোস্টেলে থাকার সময় থেকেই পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। আর্থিক কারণেই সে ভাবে কোচিং নিতে পারিনি। নিজে টিউশন পড়িয়ে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতাম। ছোটো থেকে ইচ্ছে ছিল শিক্ষক হওয়ার। পরে নিজের লক্ষ্যটাকে পাল্টে ফেলেছিলাম”।
কেশব দাসের বাবা জ্ঞানবান দাস জানান, ছেলের এই সাফল্যে যারপরনাই খুশি। তিনি বলেন যে ছোটো থেকেই পড়াশোনার জন্যশবকেখনও বকাঝকা করতে হয়নি কেসব। তিনি বলেন, “আমি একজন পরিযায়ী শ্রমিক। দিনমজুরি করে ও অন্যের জমিতে কাজ করে কোনওরকমে সংসারটা চলত। ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে স্ত্রীর কানের দুল পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে যা ঋণ নিয়েছিলাম এখনও পরিশোধ করতে পারিনি”।
অনেক না পাওয়ার মধ্যে বড় হয়েও আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় এমন সাফল্য পেয়েছেন কেশব। কঠোর ধৈর্য আর অটুট মনোবল থাকলে যে সমস্ত বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব, তা ফের একবার প্রমাণ করে দিলেন কেশব।