শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে ঘরছাড়া, ছোট্ট মেয়েকে মানুষ করার স্বপ্ন নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় দইবড়া বিক্রি করছেন স্নাতক সুনীতা

শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের জেরে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন সুনীতা। মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে যায় তাঁর ১৭ বছরের সাজানো সংসার। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার থেকে তো বাঁচলেন, কিন্তু পেট চলবে কী করে? তবে হেরে যেতে নারাজ বিজ্ঞানে স্নাতক সুনীতা চৌধুরী। আর সেই হার না মানার কাহিনীই আজ উঠে এলো সকলের মাঝে।
বর্ধমানের উদয়চাঁদ মহিলা কলেজ থেকে ২০০০ সালে বিজ্ঞানে স্নাতক বর্ধমানের বাজে প্রতাপপুরের বাসিন্দা সুনীতা চৌধুরী। ইচ্ছে ছিল স্নাতকোত্তর করার। কিন্তু বাড়ির চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাঁকে। তার পর দীর্ঘ ১৭ বছরের বঞ্চনার শিকার সে। আর এর শেষ মাস তিনেক আগে।
ঝাড়খণ্ডে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। সেই বাড়ির লোকদের অত্যাচারে এক বস্ত্রে সুনীতা নিজের নয় বছরের মেয়ের হাত ধরে চলে আসে বর্ধমানের বাড়িতে। কিন্তু তখন অনেক চিন্তা তাঁর মাথায়। মেয়েকে বড় করবেন কী করে? নিজেরই বা পেট চলবে কেমন করে? মা-বাবা দুজনেই মারা গিয়েছেন। সুনীতারা তিন বোন। তিনিই সবথেকে ছোটো। তাঁর দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
বরাবরই ভালোই সাইকেল চালান সুনীতা। আর সেই সাইকেলই তাঁকে বাতলে দিল অন্ন সংস্থানের উপায়। নিজের হাতে দইবড়া তৈরি করে, সাইকেলে করে তা বিক্রি করেন। বাড়িতে তাঁর নয় বছরের মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। করোনা কালে স্কুল বন্ধ। মেয়েকে বাড়িতে রেখেই সাইকেল নিয়ে দইবড়া বিক্রি করতে বেরোন সুনীতা।
সকালে উঠে করেন ঘরের কাজ, দইবড়ার জোগাড়। এরপর বেলা একটু গড়াতেই বেরিয়ে পড়েন সুনীতা। শহরের অলিগলি ঘুরে বিক্রি করেন দইবড়া। ঘরে ফিরে ফের ঘরের কাজ, মেয়েকে পড়ানো। দুপুরের দিকে তাঁর দেখা মেলে বর্ধমান জেলা আদালত চত্বরে ও সূর্য ঢলার সময় তাঁকে দেখা যায় টাউন হল এলাকায়। দিনে চারশো থেকে পাঁচশো টাকা রোজগার। তাতেই কোনও রকমে দিন কাটান মা ও মেয়ে।
সুনীতা বলেন, ‘‘আমার দিদি খুব ভালো দইবড়া বানাতে পারতেন। দিদির কাছেই শেখা। এখন দিদির শেখানো দইবড়াই আমার সংগ্রামের সঙ্গী”। একদম ঘরোয়া স্বাদের দইবড়া। বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। মাস খানেক পেরোতেই তাঁর দইবড়ার খ্যাতি বেশ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সুনীতার এখনও অনেকটা পথ চলার বাকি, আর তা বেশ ভালোই বুঝে গিয়েছেম্ন তিনি।