বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি! সত্যিই তো আমরাই পৃথিবীর কোথায় কী হচ্ছে তার ১০০% সবসময় জানতে পারি না। কিন্তু মাঝে মাঝেই আমরা এমন অনেক অবাক করা তথ্য পাই যে বুঝতে পারিনা আদৌ সেটি সত্যিই কিনা। এবার এরকমই এক তথ্য আপনাদের দেব যা পড়লে আপনারা চমকে যাবেন।
আজ আপনাদের ভারতের একটি গ্রামের কথা বলব যেখানে ১০০% গ্রামবাসী দাবা খেলাতে দক্ষ। উত্তর কেরালার এই গ্রাম মারোত্তিচাল ‘চেস ভিলেজ’ নামে পরিচিত। দাবা এই গ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আমরা বাঙালিরা যেমন রাস্তার মোড়ে বসে চপ মুড়ি নিয়ে আড্ডা মারি সেরকম এখানকার লোকেরা রাস্তার মোড়ে বসে দাবা খেলেন। এখানে কথা-বার্তায় সব সময় চলে আসে দাবার প্রসঙ্গ। খেলার ভিন্ন কৌশল নিয়ে সারাক্ষণ চলে আলোচনা। কিন্তু হঠাৎ এই দাবা আসক্তি কেন? এর পিছনে রয়েছে একটি ছোট্ট ইতিহাস।
ষাট ও সত্তরের দশকে এই গ্রামটি এক বড় ধরনের নেশার মুখে পড়ে। সেই নেশা আর কিছুই না সস্তা চোলাই মদ এবং জুয়ার নেশা। গ্রামের অধিকাংশ মানুষরাই এই দুটি নেশায় এমনভাবে আচ্ছন্ন হয়ে যান যে গ্রামের অবস্থা রীতিমতো ভয়াবহ হয়ে যায়। তখন বাধ্য হয়ে কয়েকজন সচেতন গ্রামবাসী সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিতে বাধ্য হন যেন গ্রামের চোলাই মদের মজুতগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু দাবা প্রেম কোথা থেকে শুরু হল? সেই সময় দশম শ্রেণীর ছাত্র সি উন্নিকৃষ্ণণ এই গ্রাম থেকে সংলগ্ন ছোট শহরে যান এবং সেখানে তিনি দাবা খেলা শেখেন। গ্রামে ফিরে এসে তিনি ঠিক করেন যে সকল গ্রামবাসীকে তিনি দাবা খেলা শেখাবেন। তার দূরদর্শিতা গ্রামের ভোল পাল্টে দেয়।তার অনুপ্রেরণা ছিলেন ১৬ বছর বয়সী মার্কিন কিংবদন্তি গ্র্যান্ডমাস্টার ববি ফিসার।
Related Posts
এখন উন্নিকৃষ্ণণ এই গ্রামে একটি রেস্টুরেন্ট খুলেছেন। আর এই রেস্টুরেন্টে সকলে দাবা খেলতে আসেন। বিশ্বনাথন আনন্দ এই গ্রামটির কথা জানতে পেরে অত্যন্ত পুলকিত হয়েছেন এবং এই গ্রামের উদ্দেশ্যে সাধুবাদ জানিয়েছেন।বর্তমানে গ্রামটি ভারতের প্রথম দাবা গ্রাম হিসাবে পরিচিত হয়েছে। শুধু তাই নয়,গ্রামটির এই দাবা খেলার প্রতি আগ্রহ নিয়ে ‘আগস্ট ক্লাব’ নামে একটি মুভি তৈরি হচ্ছে। তাই কোনদিন এই গ্রামে বেড়াতে গেলে একদম দাবার চাল দিয়ে আসতে ভুলবেন না কিন্তু।