কাঠের দোকানের চাপরাশি থেকে ফেবিকল কোম্পানির মালিক, কীভাবে সম্ভব হল এই ১ হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার, জানুন অজানা তথ্য
‘ফেবিকল’, এই নামটির সঙ্গে আমরা দৈনন্দিন জীবনে সকলেই পরিচিত। সেই ছোটবেলায় স্কুলের নানান প্রোজেক্টের কাজ থেকে শুরু করে বাড়ির নানান ভাঙা জিনিস জুড়তে, ফেবিকল যেন আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু কীভাবে তৈরি হল এই ফেবিকল কোম্পানি, কীভাবেই বা তা এতটা জনপ্রিয়তা পেল, আজ জানব সেই অজানা ইতিহাস।
কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা দিয়ে কোনও কাজ করলে যে জীবনে সাফল্য আসবেই, তার এক বড় উদাহরণ হলেন এই ফেবিকল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বলবন্ত পারেখ। তাঁর জীবনের কাহিনী, তাঁর সাফল্যের কাহিনী যে কোনও মানুষকেই যে অনুপ্রাণিত করবে, তা বলাই বাহুল্য। একসময় পিয়নের কাজ করতেন এই বলবন্ত পারেখ। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে ফেবিকল কোম্পানি তৈরি করে ১ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছিলেন তিনি।
১৯২৫ সালে ভারতবর্ষের গুজরাতের ভাবনগর জেলার মহুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বলবন্ত পারেখ। ছোটবেলায় নিজের গ্রামেরই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেছেন তিনি। এরপর মুম্বইয়ের সরকারি আইন কলেজে যোগ দেন বলবন্ত পারেখ। কিন্তু তিনি কোনওদিনই আইনজীবী হতে চাননি। তাঁর বরাবরই ইচ্ছে ছিল ব্যবসা করার।
কিন্তু আর্থিক অবস্থা তো তেমন ছিল না। আর বিয়ের পর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। এই কারণে রোজগারের জন্য ছাপাখানায় কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে বেশিদিন কাজ করেন নি বলবন্ত পারেখ। এরপর তিনি এক কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে চাপরাশি হিসেবে কাজ শুরু করেন।
তবে চাপরাশির কাজও যে তিনি খুব বেশিদিন করেছেন, তা নয়। ভাগ্যক্রমে জার্মানি যাওয়ার সুযোগ পান তিনি। সেখানে গিয়ে ব্যবসা সংক্রান্ত নানান কিছু শেখেন।
যখন বলবন্ত পারেখ কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে চাপরাশির কাজ করতেন, সেই সময় তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, সেখানে কাঠ ঠিকমতো জোড়া লাগাতে পারত না কর্মচারীরা। কাঠ জোড়া লাগাতে গেলে যে জিনিসটি ব্যবহার করা হত, তা থেকে বিশ্রি গন্ধ বের হত। সেখান থেকেই তিনি স্থির করেন যে তিনি সুগন্ধি আঠা তৈরি করবেন।
যেমন ভাবা আর তেমন কাজ। এরপরই অনেক প্রচেষ্টার পরে নানান ধরণের সিন্থেটিক রাসায়নিক ব্যবহার করে আঠা তৈরির একটি উপায় আবিষ্কার করেন বলবন্ত পারেখ। তিনি ও তাঁর ভাই সুনীল পারেখ মিলে ১৯৫৯ সালে পিডিলাইট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর বলবন্ত পারেখ দেশকে সুগন্ধি আঠা ‘ফেভিকল’ উপহার দেন।
এই আঠা বাজারে আসার পরই দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই কোম্পানিই এরপর ফেবিকুইক ও আরও অন্যান্য নানান ধরণের পণ্য বিক্রি শুরু করে। বর্তমানে এই ফেবিকল কোম্পানির মালিক হলেন বলবন্ত পারেখের বড় ছেলে মধুকর পারেখ। বর্তমানে তাদের সম্পত্তির পরিমাণ ৩.১ মিলিয়ন ডলার।